Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মালিকের ‘কোমরে দড়ি’, সব অক্সিজেন কারখানা বন্ধ ঘোষণা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সীমা অক্সিজেন কারখানার এক পরিচালককে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের সব অক্সিজেন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি শনিবার সকালে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

জাহাজভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) নেতারা বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাতে বৈঠকে বসে এ সিদ্ধান্ত নেন। সীতাকুণ্ড উপজেলার বানু বাজারে সংগঠনটির কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে সব অক্সিজেন কারখানার উৎপাদন, পরিবহন ও সরবরাহ বন্ধ আছে। তবে চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত অক্সিজেন সরবরাহ চালু থাকবে।

বিএসবিএ’র সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রামে ১৪টি অক্সিজেন কারখানা আছে, যার অধিকাংশই সীতাকুণ্ডে। এর মধ্যে ৬টি সক্রিয় আছে। এসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাহাজভাঙা মালিকদের সিদ্ধান্তে অক্সিজেন কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন কারখানাগুলো আমাদের লিংকেজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া যে ব্যবসায়ীকে কোমরে দড়ি বেঁধে ন্যাক্কারজনকভাবে অপদস্থ করা হয়েছে, তিনি আমাদের সংগঠনের সদস্য। এজন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি। ব্যবসায়ীরা এখন বলছেন, হয় তারা ব্যবসা করবেন, নয়ত সব ছেড়ে দিয়ে সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বাঁচবেন।’

‘অক্সিজেন কারখানার পক্ষ থেকে ১১৮ কোটি টাকা বিভিন্নখাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আহতদের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ করে টাকা দেয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আরও দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এরপর কেন এভাবে এক শিল্পদ্যোক্তাকে জনসমক্ষে হেয়-প্রতিপন্ন করা হল, এর নেপথ্যের কারণ আমরা জানতে চাই। আমরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে যাব।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ এবং প্রশাসনের ‘অতি উৎসাহী’ কর্মকর্তাদের দোষারোপ করে নাজমুল বলেন, ‘প্রশাসন কেন মামলায় জড়াল? বিএম ডিপোতে এতবড় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তো মালিককে কোনো ধরনের হয়রানি করা হয়নি। তারা ঠিকভাবে ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আর সীমা অক্সিজেন কারখানা সব ক্ষতিপূরণ পরিশোধের পরও কিছু পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তাদের শাস্তি চাই।’

এদিকে শনিবার (১৮ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামের সব অক্সিজেন ও জাহাজভাঙা শিল্পমালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নগরীর জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি মোড় থেকে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দীনকে গ্রেফতার করে শিল্প পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারেও অভিযান চালায় পুলিশ।

পরদিন পারভেজকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিল্প পুলিশের এক সদস্যকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেন ওই বাহিনীর চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলায়মান।

শিল্প পুলিশকে পারভেজ উদ্দীনকে সাতদিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছিল। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।

গত ৪ মার্চ বিকেলে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ছোট কুমিরায় সীমা শিল্পগ্রুপের প্রতিষ্ঠান সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। আহত ও দগ্ধ হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২১ জন।

বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অক্সিজেন কারখানাটির মালিক তিন ভাইসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তিন ভাই হলেন- সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মামুন উদ্দীন এবং দুই পরিচালক আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন।

নিহত মো. সালাহউদ্দিনের স্ত্রী রোজিনা বেগম বাদী হয়ে ৬ মার্চ রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলাটি দায়ের করেন। অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৩৭, ৩৩৮, ৩০৪ ও ৪২৭ ধারায় মামলাটি নেয় পুলিশ।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির আহ্বায়ক ১৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তদন্তে কারখানা পরিচালনায় মালিকপক্ষে অবহেলার প্রমাণ তারা পেয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

অক্সিজেন অক্সিজেন কারখানা কোমরে দড়ি বন্ধ ঘোষণা সীতাকুণ্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর