নিঃসন্তান বাদশাহ-নোভা পেল প্রতিবেশি, আসছে জলহস্তীও
১৭ মার্চ ২০২৩ ১৩:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দক্ষিণ আফ্রিকার সাড়ে পাঁচশ হেক্টর বনভূমিতে এতদিন ছিল তাদের বসবাস। সেখান থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বাংলাদেশে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নতুন ঘর পেয়েছে তারা। আমৃত্যু এটাই হয়ে গেল তাদের ঠিকানা। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নিঃসন্তান সিংহ দম্পতি বাদশা-নোভার প্রতিবেশি হয়ে এসেছে নতুন এই সিংহ জোড়া। তাদের আগমনে সিংহের ঘরে যেন আলো ফিরেছে, সাজ সাজ রব।
তবে এই সিংহ জুটি একা আসেনি, সঙ্গে নিয়ে এসেছে চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্ট। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সিংহ ও ওয়াইল্ড বিস্ট এসে পৌঁছায় বলে জানান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম।
২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজ-লক্ষ্মীর ঘরে জন্ম নিয়েছিল দুটি সিংহী বর্ষা আর নোভা। জন্মের কিছুদিন পর মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। পুরুষবিহীন নিঃসঙ্গ অবস্থায় দুই বোন প্রায় ১১ বছর কাটানোর পর ২০১৬ সালে নোভার জন্য রংপুর চিড়িয়াখানা থেকে সঙ্গী আনা হয় বাদশাহকে। আর বর্ষাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রংপুরে।
একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর চিড়িয়াখানায় ঘটা করে সিংহ বাদশাহ ও সিংহী নোভার বিয়ে হয়। কিন্তু তাদের কোনো সন্তান হয়নি। প্রায় ১৮ বছর বয়সী নিঃসন্তান নোভা-বাদশাহ সাত বছর ধরে শূন্য ঘরে দিন কাটিয়ে এখন বার্ধক্যে উপনীত। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় যেকোনো সময় তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।
এ অবস্থায় ২০২১ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে সিংহ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বছর পরও সে চিঠির সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ২০২২ সালের আগস্টে সিংহ, লাল-সবুজ ম্যাকাও, ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙারু এবং লামা প্রাণী সরবরাহের জন্য এক কোটি ৬৯ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে। ফ্যালকন ট্রেডার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় আগস্টের শেষে তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরে প্রথম চালানে তিন জোড়া করে ক্যাঙ্গারু ও লামা আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তিন জোড়া লাল-সবুজ ম্যাকাও পাখি এবং শেষ চালানে এসেছে সিংহ ও ওয়াইল্ড বিস্ট।’
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ সারাবাংলাকে জানান, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের তত্ত্বাবধানে ১৫ দিন প্রাণীগুলো কোয়ারেনটাইনে থাকবে। এরপর সেগুলোর সুস্থতা নিশ্চিত করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বুঝে নেবে।
বিড়াল পরিবারের সিংহের দু’টি উপ-প্রজাতি এখন বিশ্বে টিকে আছে। আফ্রিকান সিংহ এবং এশীয় সিংহ। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসা সিংহগুলো আফ্রিকান, তবে ক্যাপটিভ ব্রিডিং বা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সেগুলোর জন্ম।
ফ্যালকন ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. সোহেল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার মেফুনিয়েম নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা সিংহগুলো সংগ্রহ করেছি। তারা প্রায় ৫৫০ হেক্টর বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী লালনপালন করে এবং বিক্রি করে। যেহেতু বনের প্রাকৃতিক পরিবেশে সেগুলোর জন্ম হয়নি, সেজন্য ক্যাপটিভ ব্রিডিং আমরা বলছি।’
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, নতুন আসা সিংহ-সিংহীর বয়স ৯ মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে। দুই বছরের মধ্যে সেগুলো প্রজনন সক্ষম হবে।
তৃণভোজী ওয়াইল্ড বিস্টের মূল নিবাসও দক্ষিণ আফ্রিকায়। এক বছরের কম বয়সী প্রাণীগুলোও মেফুনিয়াম প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে জানান সোহেল আহমেদ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীগুলো খাপ খাওয়াতে পারবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা আর বাংলাদেশের মধ্যে পরিবেশগত তেমন কোনো পার্থক্য নেই। টেমপারেচার প্রায় একই। আমরা এর আগেও গাজীপুর সাফারি পার্কে এবং ঢাকা চিড়িয়াখানায় সিংহ এবং ওয়াইল্ড বিস্ট সরবরাহ করেছি। সেখানে কোনো সমস্যা হয়নি। প্রাণীগুলো বেঁচে আছে। ব্রিডিংও হয়েছে।’
এদিকে, কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একজোড়া জলহস্তী আনা হচ্ছে বলে জানান ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাণী বিনিময়ের আওতায় ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তীগুলো আনা হচ্ছে। আমরা সেখানে একজোড়া বাঘ দিচ্ছি। রমজানের মধ্যেই জলহস্তীগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে প্রায় ৭৩ প্রজাতির ছয় শতাধিক পশু-পাখি আছে।
ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম