অক্সিজেন কারখানায় ধর্মঘট প্রত্যাহার, মানববন্ধনও স্থগিত
১৭ মার্চ ২০২৩ ২২:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে হতাহতের মামলার আসামি সীমা অক্সিজেন কারখানার এক পরিচালকের কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেয়ার ঘটনায় এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। শনিবার থেকে কারখানাগুলো খুলে দেয়ার পাশাপাশি মানববন্ধন কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ ও ঘটনার জন্য দায়ী হিসেবে শনাক্ত শিল্প পুলিশের একজন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জাহাজভাঙা শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) ডাকে শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে চট্টগ্রামের ১৪টি অক্সিজেন কারখানার মধ্যে সচল ৬টিতে উৎপাদন, পরিবহন ও সরবরাহ বন্ধ আছে। এছাড়া শনিবার সকালে চট্টগ্রামের সকল অক্সিজেন ও জাহাজভাঙা শিল্পমালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে নগরীর জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।
চলমান কর্মসূচির মধ্যে সংগঠনটির নেতাদের শুক্রবার বিকেলে সার্কিট হাউজে বৈঠকে ডাকেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। সেখানে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে।
বৈঠকে উপস্থিত সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলমান সংকট নিরসনে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক স্যার। সেখানে শিল্প পুলিশের এসপি স্যার ছিলেন। ব্যবসায়ীর কোমড়ে দড়ি বাঁধার জন্য একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে এসপি স্যার জানিয়েছেন। শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় উনাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়ার অনুরোধ করেন এবং ভবিষ্যতে যে কোনো সমস্যায় উনাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’
বিএসবিএ’র সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম সারাবাংলাকে সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মহোদয় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শিল্প পুলিশের এসপি সাহেবও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে আমাদের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সব নেতা ছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ সদস্যকে বরখাস্তের বিষয় জানিয়ে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। সেজন্য কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে অক্সিজেন কারখানাগুলো চালু হবে। মানববন্ধন কর্মসূচিও আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।’
গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি মোড় থেকে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দীনকে গ্রেফতার করে শিল্প পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারেও অভিযান চালায় পুলিশ।
পরদিন পারভেজকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিল্প পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অরুণ কান্তি বিশ্বাসকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেন ওই বাহিনীর চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলায়মান।
শিল্প পুলিশকে পারভেজ উদ্দীনকে সাতদিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছিল। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন।
গত ৪ মার্চ বিকেলে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ছোট কুমিরায় সীমা শিল্পগ্রুপের প্রতিষ্ঠান সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। আহত ও দগ্ধ হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২১ জন।
বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অক্সিজেন কারখানাটির মালিক তিন ভাইসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তিন ভাই হলেন- সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মামুন উদ্দীন এবং দুই পরিচালক আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন।
নিহত মো.সালাহউদ্দিনের স্ত্রী রোজিনা বেগম বাদী হয়ে ৬ মার্চ রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলাটি দায়ের করেন। অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৩৭, ৩৩৮, ৩০৪ ও ৪২৭ ধারায় মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ।
এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির আহবায়ক ১৪ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তদন্তে কারখানা পরিচালনায় মালিকপক্ষে অবহেলার প্রমাণ তারা পেয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/ এনইউ