সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে: ফখরুল
১৮ মার্চ ২০২৩ ২২:১৫
ঢাকা: সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে দেশ ‘ফোকলা’ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসবিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ অভিযোগ করেন।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, চাল, ডাল, তেল এবং কৃষি ও শিক্ষা উপকরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ভারতে একটা স্লোগান ছিল, ‘অলি-গলি ম্যায় শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হ্যায়’। আজ আমাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘আওয়ামী লীগের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি’। একমত আছেন আপনারা?’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুর্নীতি গোটা বাংলাদেশকে ফোকলা অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, গোটা দেশ ফোকলা হয়ে গেছে। এরা ভোট চোর, বাংলাদেশের অর্থনীতির চোর। এদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে।’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে সবদলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট হবে, একটি জনপ্রতিনিধির সরকার হবে। তারাই দেশ চালাবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই সরকার বিনা নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে, তাদের সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। আজকে সমস্ত দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। আমরা আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছে, অসংখ্যা মানুষ আহত হয়েছে, অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে গেছে। এখনও যারা কারাগারে আছে, তাদের যে ঋণ সেই ঋণ শোধ করতে, জনগণের দাবি আদায় করতে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যত সমস্যা দেখতে পান, এই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-লবন-রসুনের দাম বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং খাত, অবকঠামো খাত— সবকিছুর মূ্লে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি। এগুলো আমাদের কথা নয়। কিছুদিন আগে পশ্চিমা বিশ্বের একটি বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ইকোনোমিক্সটের কথা। সেই পত্রিকা বলেছে যে, বাংলাদেশে কিছুদিন আগেও পশ্চিমা রাজনীতি-অর্থনীতিবিদরা খুব জোরেশোরে বলতেন যে, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে একটা মডেল, মডেল অব ডেভেলপমেন্ট। সেই পত্রিকা এখন বলছে যে, এই মডেল অব ডেভেলপমেন্টের যে ফানুস, যে বেলুন উড়ছিল আকাশে তা দুর্নীতির কারণে চুপসে পড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এদেশ আর নেই্, এদেশের কিছু আর অবশিষ্ট নেই। এই রাষ্ট্রকে ওরা ধবংস করে ফেলেছে। দু’দিন আগে সুপ্রিম কোর্টে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। তারা রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধবংস করে ফেলেছে। এদেশে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলেছে।’
হজ প্যাকেজ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হজের ব্যাপারে দুষ্টামী করা ওদের পুরনো অভ্যাস। আজ সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদের সাত লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা আর পাকিস্তানে চার লাখ টাকা। তাহলে বাংলাদেশে কেন সাত লাখ টাকা হবে? ওই যে চুরি করেছে। বাংলাদেশ বিমান থেকে চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাসির উদ্দিন অসীম, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রওনাকুল ইসলাম টিপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাঈদ সোহরাব প্রমুখ।
এছাড়া মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শফিকুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের হেলাল খান, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ড্যাবের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী ও অধ্যাপক লুৎফর রহমান সমাবেশে বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম