Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৯ মার্চ ১৯৭১: গাজীপুরে বীর বাঙালির সশস্ত্র প্রতিরোধ

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ মার্চ ২০২৩ ০৯:০১

ঢাকা: ১৯ মার্চ ১৯৭১। গাজীপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা আঁটে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের এই অপতৎপরতা রুখে দেয় বীর বাঙালি। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয় গাজীপুরের জয়দেবপুরে। সেখানে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন হুরমত, নিয়ামত ও মনু খলিফাসহ আরও অনেকে। বহুলোক আহত হন। বীর বাঙালির এই সশস্ত্র প্রতিরোধের কারণে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান বাহিনীর নীল নকশা।

বিজ্ঞাপন

জয়দেবপুরের সংঘর্ষের খবর বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ সারাদেশে। স্লোগান ওঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের সান্ধ্য আইন জারি করে।

জয়দেবপুরে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর গুলি এবং সান্ধ্য আইনের নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিবৃত দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়।’

উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলন অব্যাহত থাকে। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। চূড়ান্ত ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত পিছু হটবো না— এটাই ছিল বীর বাঙালির শেষ কথা।

দলে দলে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে ভিড় জমায় মুক্তিকামী জনতা। সমবেতা জনতার উদ্দেশ্যে শেখ মুজিব বলেন, ‘শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচার ব্যবস্থা করে যাব ইনশাল্লাহ।’

এক দিন বিরতির দিয়ে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার তৃতীয় দফা একান্ত বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় একই স্থানে বৈঠক হয় উপদেষ্টা পর্যায়ের। আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং পাকিস্তান সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। দুই ঘণ্টার বৈঠকে আলোচনার ‘টার্ম অব রোফারেন্স’ ঠিক করা হয়।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ইয়াহিয়ার মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন।’

পশ্চিম পাকিস্তানে গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না।’

জেনারেল ইয়াহিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখবেন।’

এদিকে করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ ছোট দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন তারা।

সারাবাংলা/এজেড/এমও

১৯ মার্চ ১৯৭১ প্রতিরোধ বীর বাঙালি

বিজ্ঞাপন

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১

আরো

সম্পর্কিত খবর