কার্যক্রম চলে ৪ স্থানে, সমস্যা জর্জরিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
১৯ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৪
সিরাজগঞ্জ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে এখানকার শিক্ষা কার্যক্রম। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলে চার স্থানে। নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, স্থায়ী ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীদের জন্য নেই ক্যান্টিন, ছাত্রদের জন্য নেই আবাসিক হলের ব্যবস্থা, নেই অধ্যাপক ও উপ-উপাচার্যও। ৪টি ভবনে কোনোরকমে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
২০১৫ সালের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। দেশের ৩৫তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন পাস হয় জাতীয় সংসদে। এরপর ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল ৯ জন শিক্ষক ও ৩টি বিভাগে ১০৫ জন শিক্ষার্থী দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বর্তমানে ৫টি বাংলা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও সংগীত বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৮০০ জন। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম মাত্র ২৫ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে। শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে একাডেমিক ভবন-১, মাওলানা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজে একাডেমিক ভবন-২। এছাড়া বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। আর ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
এছাড়া ছাত্রদের জন্য নেই আবাসিক হল, ছাত্রীদের ভাড়া করা একটি হল রয়েছে যেখানে মাত্র ৩৫ জন ছাত্রী থাকতে পারছেন। এদিকে ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা।
শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পাঠদান হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বিভাগের। এগুলো হলো- সংগীত, বাংলা, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান। মাওলানা সাইফউদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজে হয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের ক্লাস, একটি ভাড়া বাড়িতে চলছে প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং ছাত্রীদের আবাসিক হল রয়েছে অন্য আরেক ভবনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় আমরা যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া করি এটা কাউকে বলতে পারি না। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি তখন সবাই মনে করে আমরা যেন মহিলা কলেজে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপাড়া করার যে একটা মজা সেটা পেলাম না। আমাদের এই ক্যাম্পাস থেকে আরেক ক্যাম্পাসের দূরত প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার, সেখানে ভ্যানে বা রিকশায় যেতে খরচ হয় ১৫-২০ টাকা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্র বলেন, ‘আমাদের এখানে আবাসিক কোনো হল নেই। আমার বাড়ি অন্য জেলায়, এখানে আমি মেসে থেকে লেখাপড়া করি।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. রিফাত-উর-রহমান বলেন, ‘নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় আমাদের এখানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। মহিলা কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আসতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বিজন কুমার বলেন, ‘গবেষণা খাতে চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ অনেক কম। গবেষণা খাতে মাত্র এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। তবে এটা পর্যাপ্ত না।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম বলেন, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, বিশ্ববিদ্যালয়টি নানাভাবে অবহেলিত। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১০০ কাছাকাছি শিক্ষক রয়েছে। প্রতিটা বিভাগে প্রায় ২০জন করে শিক্ষক আছে। কিন্তু আমার এখানে মাত্র ২৫ জন শিক্ষক এবং খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৮ থেকে ১০ জন। ইউজিসি থেকে আমার এখানে কোনো শিক্ষক দিচ্ছে না। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’
শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে নিজস্ব ক্যাম্পাসই নেই, সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য আবার আবাসিক হল! তবে ছাত্রদের জন্য আবাসিক কোনো হল না থাকলেও ছাত্রীদের জন্য ভাড়া করা একটা হল রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩৫ জন রয়েছেন। আমার এখানে বছরে সরকারি যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক কম। প্রতি মাসে ভাড়া এবং শিক্ষকদের বেতন দিতে হয় ১১ লাখ টাকার ওপরে। নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য প্রকল্প করা হয়েছে, এবং সেটা ডিপিপি হয়েছে। এখন সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই নিজস্ব ক্যাম্পাস পাবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।’
সারাবাংলা/এমও