মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না: প্রধানমন্ত্রী
১৯ মার্চ ২০২৩ ১৯:১৭
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হাজার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করলেও এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। ওই বোমাবাজ, গ্রেনেড হামলাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ আত্মাসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারীরা আর কোনোদিন এদেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
রোববার (১৯ মার্চ) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে নানামুখী উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নানা চিত্র তুলে ধরেন।
‘বিএনপি ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছে, এ সরকার কিচ্ছুই করেনি। এই যে এত রাস্তাঘাট, এত উন্নয়ন আজকে খাদ্যে অভাব নেই। বারো মাস সবকিছু খেতে পাচ্ছেন। একটু একটু টমেটো খাবে, শিম খাবে একটু ফুলকপি খাবেন এখন তো তা না। এখন তো বারো মাসেই পাওয়া যাচ্ছে। সেটি তো আমরা গবেষণা করে উদ্যোগ নিয়েই করে দিয়েছি। সেগুলো খেতে খুব ভালো লাগে কিন্তু বদনামটা করার সময় গাল ভরে বলে যায়। আমার মনে হয়, এদেরকে সেই প্রশ্নটা করা উচিত? খেয়েদেয়ে নাদুসনুদুস হয়ে আমাদের বিরদ্ধে একখান মাইক লাগিয়ে সারাদিন কথা বলেই যাচ্ছে। আমি জানি না, এত মিথ্যা কথা কোথা থেকে আসে তাদের?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এদেশের মানুষের জন্য কাজ করি। জাতির পিতা আমাদের এই দেশ দিয়ে গেছেন। কাজেই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, এটিই আামদের লক্ষ্য। সামনে রমজান মাস। মানুষের যেন কষ্ট না হয়, যা যা প্রয়োজন আমরা কিন্তু তার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি এটি নজরে রাখতে হবে কেউ যেন এই সমস্ত খাবার মজুদদারি করতে না পারে, কালোবাজারি করতে না পারে। তার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
করোনাকালীন প্রণোদনার ফসল সবােই পেয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই কোটি প্রতিষ্ঠান এই প্রণোদনার উপকারভোগী এবং বাংলাদেশে এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিল না, যাদেরকে আমরা নগদ টাকা দিয়ে সাহায্য করিনি।’
ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক মন্দার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
প্রণোদনা দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন খাদ্যপণ্য দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৫০ লাখ না, যদি আরও ৫০ লাখ লোককে দিতে হয় আমরা তাও দেব। মানুষের যেন কোনো কষ্ট না হয়। আর যারা একেবারে কর্মক্ষমহীন তাদেরকে তো প্রতিমাসে করে ৩০ কেজি করে বিনামূল্যে চাল দিয়ে দিচ্ছি।’
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুজিবববর্ষের অঙ্গীকার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের গৃহ উপহার দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি গ্রামে নাগরিক সুবিধার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কাজ করি জনগণের স্বার্থে, জনগণের ক্যলাণে। কাজেই জনগণের যেন মঙ্গল হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করি। আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব, আমরা যে কাজগুলো করছি, এটি অন্তত মানুষের ঘরে ঘরে বলতে হবে। কারণ এরা (বিএনপি-জামায়াত) এই একটি মিথ্যা বারবার বলে বলে সেই মিথ্যাটাকেই সত্য করতে চায়। কিন্তু তাদের আমলে মানুষ কী পেয়েছে? খাবারের জন্য হাহাকার। বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে মানুষ মারা গেছে। কানসাটে ৯ জনের মতো মানুষ মেরেছিল।’
শ্রমিক ন্যায্য মজুরি চেয়েছিল বলে ১৭ জনকে শ্রমিককে রমজান মাসে গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া। সার চেয়েছিল বলে ১৮ জন কৃষককে হত্যা করেছিল । তাদের তো এই রেকর্ড। তারা তো এই কাণ্ডই করে গেছে। আর আজকে কারও সারও চাইতে হয় না। বিদ্যুৎ আমরা পৌঁছে দিয়েছি। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সারাদেশে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে যা যা করার আওয়ামী লীগ সেটিই করে। মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি-জামায়াতের মনে কষ্ট লাগে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই তার বাংলাদেশে কোনো মানুষ অন্ন কষ্ট পাবে না। গৃহহীন থাকবে না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনমান উন্নত হবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত করব যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
শিক্ষায় দীক্ষায় প্রযুক্তিজ্ঞানে একটি স্মার্ট জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হবে এবং এই দেশ এগিয়ে যাবে বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাজার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করলেও এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। এই বোমাবাজ, গ্রেনেড হামলাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারী, মানুষের অর্থ আত্মাসাৎকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী; এরা কোনদিন এদেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনও তাদের মেনে নেবে না।’
‘এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ যেভাবে তিনি চেয়েছিলেন সেইভাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বাঙালি চলবে। বাংলাদেশ তার সম্মান নিয়ে চলবে। জাতির পিতার জন্মদিনে এটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী, সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী তাদেরকেও সেইভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে’ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
সভায় কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, মেরিনা জামান কবিতাসহ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে
জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী শেখ হাসিনা