Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খোঁড়াখুঁড়িতে শাহজালাল বিমানবন্দরে ঢুকতেই চরম ভোগান্তি

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ মার্চ ২০২৩ ১১:২০

ঢাকা: হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারেই বিদেশগামী যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিমানের বলাকা ভবন থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনালে প্রবেশ করতেই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যানজটে পড়তে হচ্ছে বিদেশগামী যাত্রীদের। এমনকি অনেক সময় ফ্লাইট মিস হওয়ার চিন্তায় বিদেশগামী যাত্রীদের মাথায় লাগেজ বয়ে নিয়ে বহির্গমন টার্মিনালে প্রবেশ করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার ও শনিবার (১৭ ও ১৮ মার্চ) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনভর অবস্থান করে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির দৃশ্য চোখে পড়ে।

শুক্রবার সকাল ৮টা। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসংলগ্ন বিমান বাংলাদেশের বলাকা ভবন থেকে যানজট শুরু। যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল সেই যানজট পুরো বিমানবন্দর জুড়ে। বিমানবন্দরের প্রবেশ দ্বারেই বিদেশগামী যাত্রী এবং তাদের স্বজনদের শতশত গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমান যানজটে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক জুড়েই যে যানজটের দাপট।

বিদেশগামী যাত্রী রাশেদুল হাসান। যাবেন দুবাই। ফ্লাইট সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে। কিন্তু ৮টা বাজলেও তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তাই মাথায় লাগেজ নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন টার্মিনালের উদ্দেশ্যে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল থেকে রওয়ানা দিয়েছেন রাত ৪টায়। ৩ ঘণ্টায় এয়ারপোর্ট পৌঁছালেও ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছেন বিমানবন্দরের সামনে। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে লাগেজ মাথায় করে হাঁটা শুরু করেছেন।’

সকাল সাড়ে ১০টা। বিমানবন্দরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে লাগেজ মাথায় আসাদুল ইসলাম। বাড়ি সাতক্ষীরা। যাবেন কুয়েত। ফ্লাইট দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। সকাল পৌনে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিমানবন্দরের সামনে গাড়িতেই পরিবারসহ অপেক্ষা করেছেন যানজটে। কিন্তু যানজটে বসে অতিষ্ঠ হয়ে শেষে পরিবারকে বিমানবন্দরের সামনে থেকেই বিদায় জানিয়ে নিজে একাই রওয়ানা দেন বিমানবন্দরের বহিঃগমন টার্মিনালের উদ্দেশে।

বিজ্ঞাপন

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘৩-৪ মিনিটের পথ যেতে যদি ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করতে হয় তাহলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাজ কি? পুরো বিমানবন্দর খোঁড়াখুঁড়িতে ভরা। ২ মাস আগে বাড়িতে এসেছিলাম তখনও দেখেছি বিমানবন্দরের কাজ চলছে। এখনও সেই একই কাজ চলছে। এভাবে প্রবাসীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন ভোগান্তি বিদেশগামী যাত্রীদের পড়তে হয় না।’

শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় বিদেশগামী যাত্রী প্রভাস দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি পাবনা। বিমানবন্দরের ভেতরে সব রাস্তা কাটা। যার কারণে গাড়ি ঢুকতে অনেক সময় লাগছে সেজন্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বহির্গমন টার্মিনালে যাচ্ছি। কারণ প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে গ্রাম থেকে আনা গাড়িতে বসে থাকলেও গাড়ি বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। আবার ফ্লাইটও ২টার দিকে। এখন ভেতরে ঢুকতে না পারলে আবার ফ্লাইট মিস করতে হবে। সেজন্য কষ্ট হলেও মাথায় লাগেজ নিয়ে হাঁটা শুরু করেছি।’

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা। পুরো বিমানবন্দর জুড়ে যানজট। অসংখ্য ফ্লাইট এই সময়ে হজরত বিমানবন্দর ছেড়ে যায় আবার বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এই সময়ে অবতরণও করে। সব মিলিয়ে সকাল আর সন্ধ্যা হলেই বিমানবন্দরে নামে যানজট।

পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখা যায়, বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ মুখ থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল হয়ে বহুতল কার পার্কিংয়ের মসজিদ এলাকা পর্যন্ত রাস্তা কেটে সংকীর্ণ করে রাখা হয়েছে। যার কারণে এসব এলাকা দিয়ে ১ লাইনের বেশি গাড়ি চলাচল করতে পারে না। যেখানে আগে এই রাস্তাগুলো দিয়ে এক সাথে দু’টির অধিক গাড়ি চলাচল করতে পারতো সেখানে এখন ১টি গাড়িও ভালোভাবে চলতে পারে না।

অপরদিকে, বহুতল গাড়ি পার্কিংয়ের বামপাশে মানে পূর্বদিকের কোনার রাস্তাটি কেটে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। আবার বিমানবন্দরের এটিসি, ফুড ক্যাটারিং ও আমদানি কার্গো ভিলেজ পর্যন্ত রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করায় যানজট লাগছে। এখান দিয়েও একটির বেশি গাড়ি চলাচল করতে পারে না। এই রোডটি দিয়ে বিমানবন্দরের ক্যানোপিতে প্রবেশের গাড়ি, বহুতল গাড়ি পার্কিংয়ের গাড়ি এবং বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে যাওয়ার গাড়িগুলোর চাপ বাড়লে পুরো বিমানবন্দর যানজটে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

এছাড়া হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় রাত ২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত বর্তমানে সব ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। যা আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এর ফলে বিমানবন্দরে দীর্ঘসময় ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকায় সকালে ফ্লাইটের চাপ বাড়ে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে যখন অনেকগুলো ফ্লাইট ওঠানামা করে তখন বিমানবন্দরে গাড়ির চাপ বাড়ে এবং রাস্তাগুলো কাটা থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রতিমুহূর্তে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিমানবন্দরে সৃষ্ট যানজট নিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের ভেতরে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান। সেগুলোর জন্য রাস্তাগুলো সংকীর্ণ হয়েছে। কিছু কিছু জায়গা দিয়ে একটির বেশি গাড়ি যেতে পারে না। সেজন্য বিমানবন্দরে গাড়ির চাপ থাকলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেবা দিতে আমাদের কোনো আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। আমরা সবসময় যাত্রী সেবায় কাজ করে যাচ্ছি।’

তবে শাহজালাল বিমানবন্দরের যানজট আগামী ২-১ মাসের মধ্যে নিরসন হবে বলে জানিয়েছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরের সামনে গাজীপুর এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। সেজন্যও কিছু যানজট হয়। আর বিমানবন্দরের ভেতরে থার্ড টার্মিনালের কিছু আন্ডারগ্রাউন্ডের কাজ চলছে। এই কাজগুলো শেষ করা খুবই জরুরি। এই কাজগুলো চলমান থাকায় বিমানবন্দরে যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে সেটা আগামী ২-১ মাসের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। আশা করি কাজগুলো শেষ হলে বিমানবন্দরে সমস্যা থাকবে না।’ এই মুহূর্তে যাত্রীদের হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে বিমানবন্দরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সারাবাংলা/এসজে/এমও

খোঁড়াখুঁড়ি চরম ভোগান্তি শাহজালাল বিমানবন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর