৩ বছরে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ১৩ লাখ ঘর উপহার প্রধানমন্ত্রীর
২১ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫৮
ঢাকা: মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গত তিন বছর ধরে জমির মালিকানাসহ সারাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর উপহার দিচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকার। বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্য দিয়ে সারাদেশে মোট ১৩ লাখ পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদানের মাইলফলক ছাড়িয়ে যাবে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে দেশের তিনটি উপজেলায় যুক্ত হয়ে চতুর্থ পর্যায়ের ঘর ও জমি হস্তান্তর করবেন। এ সময় তিনি গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলায় নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়ার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিববর্ষের অঙ্গীকার দেশে একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন না রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণে এসব ঘর প্রদান করছে ক্ষমতাসীন সরকার।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সাল থেকে এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থাসহ গৃহ নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৭ লাখ ৭১ লাখ ৩০১টি পরিবারকে। প্রতি পরিবারের পাঁচ জন সদস্য হিসেবে মোট উপকারভোগী ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘গত তিন বছরে ১৩ লাখ মানুষ নিজভূমে আশ্রয় পেয়েছেন, জমির মালিক হয়েছেন, ঘরের মালিক হয়েছেন। এই কর্মসূচির একটা বড় দিক হচ্ছে- প্রতিটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রীকে দুই শতক জমির মালিকানার দলিল করে দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে তাদের নামজারি সম্পাদন করে দেওয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব ডিজাইনে এসব ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’
জমিসহ ঘর প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রথম পর্যায়ে ২৩ জানুয়ারিতে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি পরিবারকে মালিকানাসহ গৃহ হস্তান্তর করেছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবারকে ঘর উপহার দিয়েছেন। তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে ঘর প্রদান করা হয়। ১ম ধাপে ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে ঘর প্রদানসহ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২য় ধাপে ওই বছরের ২১ জুলাই সালে ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর দেওয়া হয়। চতুর্থ পর্যায়ে আগামী ২২ মার্চ ৩৯ হাজার ৩৬৫টি পরিবারকে জমির মালিকানাসহ ঘর উপহার দেওয়া হবে।’
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ২১১টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে নয়টি জেলা পূর্ণাঙ্গভাবে গৃহহীন-ভূমিহীন হয়েছে। আগামীকাল ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩৯ হাজার ৩৬৫টি একক গৃহ হস্তান্তর করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি জেলার সঙ্গে ভার্চুয়ালি কানেক্টেটেড থাকবেন।’
২০২০ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে। সরকারের তিনটি কর্মসূচির আওতায় দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার কাজ করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্প। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২।
উল্লেখ্য, সরকার ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কোন জেলায় কতজন ভূমিহীন, গৃহহীন ও জমি আছে ঘর নেই— এমন মানুষের তালিকা তৈরি করে। ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্য মতে ওই সময় পর্যন্ত দেশে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ ছিলেন যারা ভূমিহীন, গৃহহীন ও জমি আছে কিন্তু ঘর নেই। ওই তালিকা থেকেই এখন সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ যে কৃষিশুমারি করেছে সেখানে বলা হয়েছে, দেশে খানার সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ। এদের মধ্যে কোনো ধরনের জমি নেই বা ভূমিহীন খানার সংখ্যা ৪০ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৯ সালের ৯ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে এই জরিপ পরিচালনা করে বিবিএস।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম