Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসপাতালে ভর্তি কোভিড রোগীরা সুস্থ হলেও বেড়েছে স্বাস্থ্য জটিলতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ মার্চ ২০২৩ ২২:৪৬

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। এর মাঝে যারা সংক্রমণমুক্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন তারা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদযন্ত্রের জটিলতার (উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদকম্পন, বা পা ফুলে যাওয়া) উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ বছরের কম বয়সীদের তুলনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদযন্ত্রের জটিলতা এবং স্নায়ুবিক জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ব্লকের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‌‌‘লং টার্ম সিকুয়েল অব কোভিড-১৯: অ্যা লংগিটুডিনাল ফলো-আপ স্টাডি ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পাঁচ মাসের ফলোআপের ফলাফল সম্প্রতি গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়ায় প্রকাশিত হয়।

ইউএসএআইডি-র অর্থায়নে পরিচালিত এশিয়ার মধ্যে এটি প্রথম গবেষণা উল্লেখ করা হয় সেমিনারে।

গবেষণায় বলা হয়, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীরা পরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উচ্চঝুঁকিতে থাকে, যাকে পোস্ট-কোভিড-১৯ সিনড্রোম (পিসিএস) বা লং কোভিড হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত কোভিড-১৯-মনোনীত দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত (আরটি-পিসিআর দ্বারা শনাক্তকৃত) ১৮ বছরের বেশি বয়সী ৩৬২ জন ব্যক্তিকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অংশগ্রহণকারীদের কোভিড-পরবর্তী জটিলতা নির্ণয় করার জন্য সেরে ওঠার ১ মাস, ৩ মাস এবং ৫ মাস পর ফলো-আপ করা হয়। তাদের স্নায়ুবিক, হৃদযন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরও বলা হয়, এ সব রোগের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোও নারী-পুরুষ ভেদে পৃথক; পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে কোভিড-পরবর্তী জটিলতার প্রকোপ দেড় থেকে চার (১.৫-৪) গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা গেছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত এবং নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছিল এমন রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার আশঙ্কা হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় দুই থেকে তিন (২-৩) গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গুরুতর কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করা সত্ত্বেও রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করার (ব্লাড সুগার) সম্ভাবনা যাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়নি তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১১ গুণ বেশি ছিল এবং তাই যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাদের বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। একটি শঙ্কার বিষয় হলো হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ছিল প্রতি ১,০০০ জনে ১০ জন। একইভাবে কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে কিডনিজনিত জটিলতা (হাই ক্রিয়েটিনিন এবং প্রোটিনিউরিয়া) এবং লিভারজনিত জটিলতা (বর্ধিত লিভার এনজাইম) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। আশ্বস্ত করার মতো বিষয় হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উভয় গ্রুপের জটিলতাগুলোর বেশিরভাগ হ্রাস পেয়েছে। তবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃদকম্পন, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ইত্যাদির মতো কিছু সমস্যা রোগমুক্তির ৫ মাস পরেও মৃদু-কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়নি।

এই ফলাফলগুলো কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের ফলোআপ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। উচ্চ ঝুঁকির কারণে বয়স্ক এবং হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

অনুষ্ঠানে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলো উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত।

তিনি উল্লেখ করেন একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের অনুপস্থিতি প্রায়শই সহজে নির্ণয় করা যায় না এমন কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোর চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রস্তাবিত গাইডলাইন চিকিৎসকদের সর্বাধিক সাফল্যের সঙ্গে রোগ সনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে সহায়তা করবে।

সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ গবেষণার ফলাফলের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ধরন নির্ণয়ে এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে, কোভিড-১৯-এ যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তারা যদি নিয়মিত ফলোআপ করেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন তবেই এই গবেষণা সার্থক হবে।’

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ-র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি দীর্ঘমেয়াদি কোভিড জটিলতা ও তা সমাধানের জন্য আইসিডিডিআর,বি এবং বিএসএমএমইউ-র বিজ্ঞানীদের এই যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার আরো নতুন কিছু ধারণা দেন ।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আইসিডিডিআর,বি ও বিএসএমএমইউ যৌথভাবে আরো নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম গবেষকদের এবং গবেষণা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দেন।

তিনি গবেষণায় অর্থায়নের জন্য ইউএসএআইডি-কে ধন্যবাদ জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

ইউএসএআইডি-র হেলথ এক্সপার্ট ড. সামিনা চৌধুরী সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় ইউএসএআইডি-র বিভিন্ন সহযোগিতা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কী ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং তার ব্যাপ্তি কেমন ছিল তা অজানা ছিল। কিন্তু এই গবেষণা সে বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে। এই উদ্যোগের জন্য আইসিডিডিআর,বি ও বিএসএমএমইউ-কে অনেক ধন্যবাদ।’

সেমিনারে বিএসএমএমইউ’র কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ, এবং আইসিডিডিআর,বির নিউট্রিশন ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এবং প্রধান গবেষক ডা. ফারজানা আফরোজ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়াও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআর,বি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/একে

করোনা করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর