ঢাকা: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার চারপাশে চারটি নদী থাকার পরেও আমরা ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করছি। এটি পুরো বাংলাদেশের চিত্র।
বুধবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সুইডিশ অ্যাম্বাসির সহযোগিতায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্র্যান্ড বলরুমে সেমিনারটি আয়োজন করে ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং (ডিপিএইচই)।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত গভীর থেকে পানি উত্তোলনের ফলে পানির সঙ্গে নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিকও উঠে আসছে। কিন্তু এটি বাংলাদেশের একার হাতে নাই। আমাদের অধিকাংশ নদীর উৎসস্থল হিমালয়। তাই উপর থেকে পানি না দিলে আমাদের পানির সংকট হয়।’
তিনি বলেন, ‘গৃহকাজ, কৃষি ও শিল্পখাতে পানির প্রয়োজন হয় আমাদের; যার ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশই আমরা পূরণ করতে পারি। কিন্তু আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা। শহরাঞ্চলেও পানির সংকট রয়েছে। শহরাঞ্চলে নিরাপদ স্যানিটারি নিশ্চিত করতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। ঢাকাকে ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় ভাগ করে স্যুয়ারেজ পরিশোধনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দুয়েকটি কাজ করছে। পাগলাসহ আরও কয়েকটির কাজ চলছে।’
এছাড়াও মন্ত্রী গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও অন্যান্য পরিবেশগত সংকটের জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর দূষণের ফলে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। তাই ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে তাদের সাহায্য বাড়াতেই হবে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, নদী ভাঙন, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমিকম্পসহ নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার দিকটি মাথায় রেখে ফান্ড বরাদ্দ করতে হয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ছয় নম্বর। বাংলাদেশ সরকার ১৭টি লক্ষ্য অর্জনেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে যেকোনো একটি লক্ষ্যকে অধিক গুরুত্ব না দিয়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অগ্রাধিকার বুঝে ব্যয় করা হয়।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মহাপরিচালক মো. সরওয়ার বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ড. বর্দন জাং রানা, ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট, সুইডেন রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা বারেগ ভন লিন্ডে। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন- এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্জ। সেমিনার শেষে অতিথিরা এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর তোলা পাঁচজন ফটোগ্রাফারের ছবি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন ও তাদের পুরষ্কৃত করেন।
এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানের জন্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩’ পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানি সম্পদের জন্য একটি বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয় এবং এরপর থেকে এ দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।