Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২৩ মার্চ ১৯৭১: পাকিস্তান দিবস ঢেকে গেল প্রতিরোধ দিবসে

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:০০

ঢাকা: ২৩ মার্চ ১৯৭১। এদিন ছিল ‘পাকিস্তান দিবস’। বীর বাঙালি আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল, এদিন তারা ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে পালিত হয় প্রতিরোধ দিবস। এ দিন সারা বাংলায় উড়ানো হয় বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা।

ঢাকা পরিণত হয় পতাকার নগরীতে। ঢাকা শহর বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকায় ছেয়ে যায়। সেদিন প্রেসিডেন্ট ভবন, গভর্নর হাউস, সেনানিবাস ও বিমানবন্দর ছাড়া কোথাও পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায়নি।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাকের ডগায় পতপত করে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা।

শহীদ জননী জাহানা ইমাম তার ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইয়ে লিখেছেন, ‘আজ প্রতিরোধ দিবস। খুব সকালে বাড়িসুদ্ধ সবাই মিলে ছাদে গিয়ে কালো পতাকার পাশে আরেকটা বাঁশে ওড়ালাম স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন পতাকা। বুকের মধ্যে শিরশির করে উঠল।’

পল্টন ময়দানে জাতীয় পতাকা ওড়ায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। নূরে আলম সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘স্পষ্ট মনে আছে, বিউগল আর ড্রাম বাজিয়ে সুরের মূর্ছনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি গানের সুর পল্টনে উপস্থিত সব মানুষের চিত্তকে উদ্বেলিত করছিল। সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছিল বাংলার দুর্জয় ও অকুতোভয় জনতা।’

‘মোস্তফা মোহসীন মন্টু, খসরু, হাসানুল হক ইনু, মহানগর ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মিলিতভাবে আস্তে আস্তে পতাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করেন। এ সময় সামরিক কায়দায় মঞ্চে দণ্ডায়মান স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতাকে অভিবাদন প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিনিধি হিসেবে আমরা অভিবাদন গ্রহণ করি।’

‘অনেক ব্রিগেড সাজানো হয়েছিল। একটির পর একটি ব্রিগেড অভিবাদন জানিয়ে মঞ্চ অতিক্রম করে পাশে অবস্থান নিচ্ছে, আরেকটি ব্রিগেড মঞ্চের দিকে মাথা বাঁকিয়ে অভিবাদন দিয়ে প্যারেড করে এগিয়ে যাচ্ছে। শেষ ব্রিগেডটি অভিবাদন জানানোর পর আমরা মঞ্চ থেকে নেমে পল্টনের গেটে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে গেলাম। সেখান থেকে ব্যান্ড বাজিয়ে বিউগলে জাতীয় সংগীতের সুর তুলে মিছিল করে দৃপ্ত পদভারে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের দিকে এগিয়ে চললাম।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এদিন সাধারণ ছুটি থাকায় জনতার ঢল নামে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মিছিলের পর মিছিল আসতে থাকে। সবার হাতে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা।

বাঁ হাতে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে ধরে ডান হাত জনতার উদ্দেশে বাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলার মানুষ কারও করুণার পাত্র নয়। আপন শক্তির দুর্জয় ক্ষমতাবলেই তারা স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনবে।’

ঢাকা টেলিভিশনের বাঙালি কর্মীরা এদিন অভূতপূর্ব এক কাজ করে বসেন। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান এদিন মধ্যরাত পেরিয়ে আরও ৯ মিনিট চলে। বাজেনি পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত। পর্দায় ওড়েনি পাকিস্তানের পতাকা।

জাহানারা ইমাম লিখেছেন, ‘টেলিভিশনের অনুষ্ঠান যে আজকে শেষই হয় না। অন্যদিন সাড়ে ৯টার মধ্যে সব সুনসান। আজ দেখি মহোৎসব চলছে তো চলছেই। টেলিভিশনে ঘোষক সরকার ফিরোজ উদ্দিন সমাপনী ঘোষণায় বলেন, এখন বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা বেজে ৯ মিনিট। আজ ২৪শে মার্চ, বুধবার। আমাদের অধিবেশনের এখানেই সমাপ্তি। এরপর পাকিস্তানি ফ্ল্যাগের সঙ্গে পাক সারজমিন শাদবাদের বাজনা বেজে উঠল। এতক্ষণে রহস্য বোঝা গেল। ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসে বীর বাঙালিরা টেলিভিশন পর্দায় পাকিস্তানি পতাকা দেখাতে দেয়নি।’

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘পাকিস্তান দিবস’ -এর বাণীতে মিথ্যাচার অব্যাহত রাখেন। তার বাণীতে লেখা ছিল, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মিলেমিশে একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের পথে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। তবে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকি তাহলে কোনো কিছুই আমরা হারাব না।’

সারাবাংলা/এজেড/এমও

২৩ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তান দিবস প্রতিরোধ দিবস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর