Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসির চিঠি ‘অতীতের ভোটের লেটেস্ট কৌশল’: মির্জা ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ মার্চ ২০২৩ ১৯:১৮

ঢাকা: সংলাপের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চিঠিকে ‘অতীতের মতো ভোট করার লেটেস্ট কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে বিএনপি।

সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেওয়া চিঠির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অতীতে কেউ ভোট দিতে পেরেছেন? আবার ওই কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এবার একুট চাপাচাপি বেশি। পরশিরা বলছে যে, আগের মতো ভোট আর চলবে না। জাপানের রাষ্ট্রদূত তো বলেই ফেললেন যে, বাপের জন্মে শুনিনি যে, আগের রাতে ভোট হয়। ওই জন্য এখন আবার নতুন নতুন কৌশল। তারমধ্যে লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের চিঠি।’

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের চিঠির বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সোমবার (২৭ মার্চ) দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে আমি এখনই কথা বলতে চাই না। আমাদের সোমবার স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং আছে; সেই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ডিও পত্রের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানান। এর আগে, গত বছরের শুরুতে হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ করে। তবে বিএনপি এবং তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো ইসির সংলাপে যায়নি।

সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষমতা ইসির নাই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা আছে নাকি? সে পারবে এই প্রশাসনকে সোজা করতে?’ এ সময় দলের নেতাকর্মীরা ‘না’ ‘না’ স্লোগান দিতে থাকলে তিনি বলেন, ‘সঠিক কথা। এই নির্বাচন কমিশন চিঠি-টিঠি দিয়ে অযথা কেন হয়রান হচ্ছে। আপনারা ভদ্র লোকের মতো থাকতেন, ভদ্র লোকের মতো থাকেন, বেতন-টেতন নেন।’

বিজ্ঞাপন

ইসির উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইভিএম দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারছেন না। আরও অন্যান্য কী আছে না আছে। অতীতে নির্বাচন কমিশন ছিল। তারা শুধু টেনিং বাবদ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছেন। আপনারা এরকম কিছু আছে কিনা সেগুলো দেখেন। অযথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনারা এই সমস্ত কথা বলে নিজেকে খাটো করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘সংকট একটাই। সেই সংকট হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকার কে থাকবে? নির্বাচনকালীন যদি আওয়ামী লীগ থাকে, তাহলে এই নির্বাচন কোনোদিনই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, হবে না- এটা প্রমাণিত। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোও। সুতরাং এসব অযথা এক্সসারসাইজ না করে আসল জায়গায় আসেন। আসল জায়গাটা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। সেটা নিয়ে কাজ করুন, সেটা নিয়ে কথা বলুন, সেটা নিয়ে ঘোষণা দিন। অন্য কোনো কিছু দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন একটা খেলায় নেমেছে। এই খেলাটি কি? যে আমার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলব, ভোটের কথা বলব, ভোটও করব। কিন্তু আমার কাজটা আমি করব। আমার মতো করে নির্বাচন কমিশন গঠন করব, আমার মতো করে প্রশাসন চলবে, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি সব আমার কথায় চলবে এবং আমি যা চাইব সেইভাবে চলবে।’

তিনি বলেন, ‘এ জন্য ২০১৪ সালে যে নির্বাচন করেছে সেই নির্বাচনে কোনো ভোটই হয় নাই। ১৫৪ জনকে আগেই ঘোষণা করে ফেলল যে, তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের কোনো নির্বাচন হয়েছিল বলে আমরা জানা নাই। ঠিক একই কায়দায় ২০১৮ সালে আগের রাত্রে ভোট শেষ। অনেকে ভোট দিতে গেছেন ভোট কেন্দ্রে, গিয়ে মরুব্বিদের বলেন, চাচা হামার ভোট তো হয়ে গেছে আগের রাত্রেই। কেউ ভোট দিতে পারেনি।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব শেষ করে দিয়েছে। তারা (সরকার) খালি বলে এত উন্নয়ন করেছে। তা আমাদের নাকি চোখ অন্ধ, আমরা উন্নয়ন দেখতে পাই না। আমি মাঝখানে বরিশাল গিয়েছিলাম, বরিশাল থেকে আসার পথে পদ্মাসেতুর উপরে দেখি, সেতুর উপরে অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রিপেয়ার করা হচ্ছে। এক বছর পার হয়নি অলরেডি রিপেয়ারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেতুর রাস্তায় যে বিটুমিন, সেই বিটুমিনের আস্তর খুলে যাচ্ছে। এই হচ্ছে তাদের উন্নয়নের নমুনা।’

তিনি বলে, ‘পত্রিকা খুললে দেখবেন মানুষ কীভাবে ন্যায্যমূল্যে চাল-ডাল-তেল কেনার জন্য ট্রাকের পেছনে লাইন দিচ্ছে। অনেকে আবার পাচ্ছেও না। আবার তারা (সরকার) পাতাল রেল করছে। পূর্বাচলের ওই জায়গায় পাতাল রেল করা কি খুব বেশি প্রায়োরিটি হয়ে গেছে? কোনটাই না। অথচ যেটা প্রায়োরিটি দরকার- চাল, ডাল, তেল, লবণসহ সবকিছুর দাম বেড়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গ্যাসের দাম বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কথা একটাই- মানে মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নাও, মানে মানে পদত্যাগ কর, মানে মানে সংসদ বিলুপ্ত কর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কর। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের অধীনে এখানে নির্বাচন হবে এবং জনগণ ভোট দেবে। এটাই আমাদের শেষ কথা।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ হবে। যে দেশ সাম্য, সামাজিক মূল্যবোধ, অর্থনৈতিক মুক্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমরা ৫১ বছরে পরে যখন স্বাধীনতা দিবসের এই আলোচনায় উপস্থিত হয়েছি, তখন অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হয় যে, স্বাধীনতার মূল চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন আজকে ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। কেন হয়েছে? একটি দলের জন্য। যে দল ক্ষমতায় থাকার জন্য স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট প্রক্রিয়ায় এদেশের মানুষের কথা বলার অধিকারকে, গণতন্ত্রকে, অর্থনৈতিক অধিকারকে লুট করে বাংলাদেশকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়ে সারা বিশ্বে লজ্জ্বায় ফেলে দিয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলিমের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

বিএনপি মির্জা ফখরুল

বিজ্ঞাপন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

আরো

সম্পর্কিত খবর