Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নৌকার টিকিট পেয়ে আলোচনায় এলেন নোমান আল মাহমুদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ মার্চ ২০২৩ ২২:০০

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ২৭ জন। এদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন অন্তত ১০ জন। কিন্তু যাকে নিয়ে কোনো আলোচনাই ছিল না এবং দৃশ্যমান প্রচার-প্রচারণায় যিনি ছিলেন না, তিনিই পেলেন নৌকার টিকিট।

নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রায় পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে এই মনোনয়ন তাকে এনে দিয়েছে আলোচনা পাদপ্রদীপে। মনোনয়ন পেয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ মনোনয়নের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নয়, তৃণমূলের কর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় টেলিফোনে কথা হয় নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সরব, কিন্তু আত্মপ্রচারে পিছিয়ে থাকা এই নেতা নিজের বাসায় নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছিলেন। নোমান আল মাহমুদ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নোমানের সঙ্গে নাছিরকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নেতাকর্মীরা। অনুসারীদের ধারণা, এ মনোনয়নের নেপথ্যের কারিগর আ জ ম নাছির উদ্দীন।

এলাকার লোকজনের মধ্যে আলোচনা আছে, বিদ্যমান ভোটের পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের টিকিটি যিনি-ই পেয়েছেন, তিনি-ই যাবেন সংসদে। এমন আলোচনাকে সত্যি প্রমাণ করে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনের বন্যায় ভাসাচ্ছেন নৌকার প্রার্থীকে। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অভিনন্দন বার্তাও প্রচার হচ্ছে ফেসবুকে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা’র সঙ্গে আলোচনায় মনোনয়নের খবর প্রথম জানার বিষয়টি তুলে ধরলেন নোমান আল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের গণহত্যা দিবসের আলোচনা আলোচনা সভা চলছিল। ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া সাহেব আমাকে মোবাইলে একটা মেসেজ পাঠান। সেখানে লেখা ছিল- আপনি কোথায় আছেন, দ্রুত যোগযোগ করুন, সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আপনাকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, অভিনন্দন। এটা প্রচার হওয়ার পর পুরো হলরুমে স্লোগান উঠল।’

‘আমি বিপ্লব বড়ুয়াকে ফোন করি। তখন তিনি আমাকে বললেন, দ্রুত যেন কেন্দ্রীয় দফতর থেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করি। আমার ভাতিজা ঢাকায় থাকে, তাকে পাঠিয়ে সেটি সংগ্রহ করি। এরপর আমি নাছির ভাইকে নিয়ে নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করি।’

মনোনয়ন পাবেন, সেটা ভাবতে পেরেছিলেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। যে কোনো রাজনৈতিক কর্মীর আশা থাকে নেতা হবে, এমপি হবে, খুব স্বাভাবিক। আমারও প্রত্যাশা তো ছিলই। আমি ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মঈনউদ্দিন খান বাদল সাহেবের নির্বাচনী সচিব ছিলাম। উনি মারা যাবার পর উপনির্বাচনে মোছলেম ভাইয়ের নির্বাচনী সচিব ছিলাম। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য আমি এই আসনে কাজ করেছি। গত দুইবার আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এজন্য মনোনয়ন পাব, এমন প্রত্যাশা ছিল।’

নৌকার টিকিট পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নোমান আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি, জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের একজন কর্মীকে মূল্যায়ন করেছেন। আমাকে নয়, তৃণমূলের কর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন। আমি অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছি। এই মনোনয়ন আমার রাজনৈতিক জীবনের বড় প্রাপ্তি। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে। তারা সাংগঠনিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও দলকে ক্ষমতায় আনবে।’

কর্ণফুলী নদীপাড়ের বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ এবং শহরের চান্দগাঁও ও বাকলিয়া-পাঁচলাইশের একাংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫। নোমান আল মাহমুদের বাড়ি বাকলিয়ার ঘাসিয়াপাড়া এলাকায়। নিভৃতচারী এই নেতার চট্টগ্রাম শহরে যেটুকু পরিচিতি আছে, বোয়ালখালীর লোকজন সে অর্থে তাকে চেনে না, এমন আলোচনা চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

নোমানকে নৌকার টিকিট দেয়া প্রসঙ্গে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নোমান আল মাহমুদ সাংগঠনিক মানুষ, উনার বিষয়ে নেতিবাচক কোনো আলোচনা নেই। ভাবমূর্তি ভালো। বই পড়েন, প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা লালন করেন। আপাদমস্তক একজন রাজনীতিক। একজন রাজনৈতিক নেতার মূল্যায়ন হয়েছে, এটা ভালো। রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের হাতে তুলে দেয়ার এমন পদক্ষেপ যেন অব্যাহত থাকে।’

২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফায় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মারা গেলে চলতি মেয়াদের প্রথম দফায় আসনটি শূন্য হয়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি গত ৫ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন।

নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল এই আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ৫ এপ্রিলপ্রতীক বরাদ্দ করা হবে ৬ এপ্রিল।

গত ২০ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়। ২২ মার্চ শেষদিন পর্যন্ত ২৭ জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন।

এরা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুল ইসলাম, এস এম কফিল উদ্দীন, মো. হায়দার আলী চৌধুরী, মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. আরশেদুল আলম বাচ্চু, বোয়ালখালী উপজেলা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহেদুল হক ও সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ মনছুর আলম, নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের এবং জাতীয় শ্রমিক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুল ইসলাম।

নগরীর মোহরা সাংগঠনিক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশেক রসুল খান ও সুকুমার চৌধুরী, পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের সদস্য মো. এমরান ও বায়েজিদ বোস্তামি থানা কমিটির সদস্য কফিল উদ্দিন খান। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল কাদের, সাবেক সহ সভাপতি এস এম আবুল কালাম ও দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সহ সভাপতি জহুর চৌধুরী।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্য আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ দফতর সম্পাদক মো. মাহাবুব রহমান ও নগর কমিটির সাবেক সহ সভাপতি এটিএম আলী রিয়াজ খান এবং সাবেক সাংসদ প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিরিন আহমেদ এবং একই আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত মঈনউদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী চান্দগাঁও ওয়ার্ডের আহবায়ক কমিটির সদস্য সেলিনা খান।

তবে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় যারা সরব ছিলেন, তারা হলেন- এস এম আবুল কালাম, আবদুচ ছালাম, শিরিন আহমেদ, সেলিনা খান, মোহাম্মদ আবদুল কাদের, আরশেদুল আলম বাচ্চু, মনোয়ার হোসেন, সুকুমার চৌধুরী এবং বিজয় কুমার চৌধুরী।

সারাবাংলা/আরডি/একে

আওয়ামী লীগ নোমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর