।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দৈব-দূর্বিপাক ছাড়া যেখানে কেউ ফেল করে না। সবাই যেখানে কৃতকার্য হয় কৃতিত্বের সঙ্গে, সেখানে সবাই নাচতে আসবে, গাইতেই আসবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোথায় সেই নৃত্যগীত! সবাই তো দাঁড়িয়ে আছে- হৈ-হুল্লোর করছে না কেউ!
হতাশ ক্যামেরা শিল্পীরা জিপি-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে এনে একখানে দাঁড় করিয়ে ছবি নিচ্ছেন। কিন্তু আপনা-আপনি সৃষ্ট উচ্ছ্বাসের বিচ্ছুরণের সঙ্গে কৃত্রিম উচ্ছ্বাসের তফাতটা যেন দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে উঠছিল।
বড়দের সাফল্য নেচে গেয়ে উদযাপনের জন্য যেসব ছোটরা হাজির হয়েছিল, তারাও হতাশ। এরই মধ্যে শোনা গেল কর্তৃপক্ষ নাকি হৈ-হুল্লোর করতে নিষেধ করেছে।
‘কোথায় ড্রাম, কোথায় ঢোল, কোথায় বড় আপুরা? কিছুই তো বুঝছি না’- দশম শ্রেণির ছাত্রী ফৌজিয়া হাসানের এই আক্ষেপ শোনার পর সোজা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসের দফতরে গিয়ে হাজির। বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞাসা, ম্যাডাম, এত ভালো ফলাফলের পরও শিক্ষার্থীরা শান্ত কেন? ওদেরকে কী নাচতে নিষেধ করেছেন? ওরা কী আজ নাচবে না?
‘অবশ্যই ওরা আনন্দ করবে। ওদের তো নিষেধ করা হয়নি। তবে এখন ঘরে বসেই ফলাফল জেনে যায় সবাই। তাই আগের মতো আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে না ক্যাম্পাস।’
নাজনীন ফেরদৌসের সঙ্গে কথার ফাঁকেই শোনা গেল ড্রামের আওয়াজ আর হৈ-হুল্লোর। অর্থাৎ বিলম্ব হলেও ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ক্যাম্পাস কাঁপতে শুরু করেছে সাফল্যে মোড়ানো ফলাফল পাওয়া কৃতি শিক্ষার্থীদের উল্লাস-উচ্ছ্বাসে।
বৈশাখের রৌদ্রতপ্ত দুপুরে জিপি-৫, গোল্ডেন জিপি-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও আনন্দে মেতেছেন। তাদের পক্ষে হৈ-হুল্লোর করা সম্ভব না হলেও ‘মেধাবী’ সন্তানের একাডেমিক সাফল্যে তারাও আনন্দে আত্মহারা। কেউ কেউ আনন্দ অশ্রুতে সিক্ত!
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মূল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় জিপি-৫ পাওয়া তানজিনা খন্দকারের গর্বিত মা সোহেলী খন্দকারের সঙ্গে। সবার কাছে মেয়ের জন্য দোয়া চেয়ে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার এসএসসি পরীক্ষার সময় প্রশ্নফাঁসের মহোৎসব হয়েছে। ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের তো ফাঁস হওয়া প্রশ্নের প্রয়োজন পড়ে না। তারপরও প্রশ্নফাঁস নিয়ে যখন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন আর টেনশনের শেষ থাকে না। কারণ, যে কোনো মুহূর্তে পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিতের ঘোষণা আসতে পারে। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে ভালো মতো পরীক্ষা দেওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। আজ ওর ভালো ফলাফলে স্বস্তি পাচ্ছি।’
কৃতি শিক্ষার্থী ফারুজ রাফিয়াও পেয়েছে জিপিএ-৫। মা ফৌজিয়া জাহানের হাত ধরে সে দাঁড়িয়েছিল মাধবীলতা ফুলের ছায়ায়। কথা হয় তার সঙ্গেও।
‘আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। এইচএসসিতেও যদি ভালো রেজাল্ট হয় তাহলে মেডিকেলে পড়ব। দেশের মানুষকে সেবা করব।’
কিন্তু গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া ফারজানা হাসান সৌমীর চিন্তাটা একটু অন্য রকম। তার প্রথম পছন্দ ‘চিকিৎসা পেশা’। কিন্তু কোনো কারণে যদি মেডিকেলে পড়তে না পারে, তাহলে সে অর্থনীতিতে পড়ে মো. হাসান শওকতের মতো ব্যাংকার হবে। দেশ ও মানুষের সেবা করবে।
তবে সবার থেকে একটু আলাদা চিন্তা-চেতনা ধারণ করতে শিখে ফেলেছে জিপিএ-৫ পাওয়া নির্বাচিতা পাল। পুঁথি নিলয় প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী শ্যামল পালের মেয়ে নির্বাচিতা পাল বড় হয়ে যুক্ত হতে চায় সৃজনশীল প্রকাশনার সঙ্গে। হতে চায় সৃজনশীল মানুষ। তার চেয়েও বড় কথা, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ভালোবেসে আমৃত্যু বাংলাদেশেই থাকতে চায় নির্বাচিতা পাল।
তার ভাষায়, ‘বড় হয়ে যাই করি না কেন, কখনো দেশ ত্যাগ করব না। দেশে থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই।’
বড় হয়ে দেশের সেবা করতে চায় নাশরা সুলতানা হাসান, নাদিয়া মেহজাবীন, সানজিদা শারমীন, তুলি আক্তার, রুবিনা মেহরুবা- সবাই। ওরা পেয়েছে জিপিএ-৫। কেউ কেউ গোল্ডেন জিপিএ-৫।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল ১৬১২ শিক্ষার্থী। ২ জন ছাড়া পাস করছে সবাই। পাসের হার ৯৯.৮৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৪১ জন।
ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, ‘শিক্ষকদের সিরিয়াসনেস, শিক্ষার্থীদের কঠোর অনুশীলন আর অভিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে আমাদের এই ভালো ফলাফল। আমরা এটাকে ধরে রাখতে চাই।’
সারাবাংলা/এজেড/এটি
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook