ডি ভিলিয়ার্সদের কান্নার পাশাপাশি থামবে না নতুন বিশ্বরেকর্ডও
২৭ মার্চ ২০২৩ ০৩:২৭
ঢাকা: দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘চোকার্স’ নামটি ব্রিটিশ মিডিয়ার দেওয়া। এককালে বিশ্বক্রিকেটে নামটাম দেওয়ার গুরুদায়িত্ব তারাই পালন করত। তো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে চোকার্স নামটি পাকাপোক্ত হয় বিশ্বকাপের কিছু ঘটনায়। এসব ঘটনার মাঝে আবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল ম্যাচ টাই করেও বাদ পড়ায় ‘চোকার্স’ আওয়াজ পুরোপুরি বৈধতা পায়। ওই ম্যাচে শেষ চার বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১ রান। স্ট্রাইকে দলকে এতদূর পর্যন্ত টেনে আনা ল্যান্স ক্লুসনার। কিন্তু শেষ রানটি নিতে গিয়ে বাধলো বিপত্তি। নন স্ট্রাইকে অ্যালান ডোনাল্ড বুঝে উঠতে পারছিলেন না তার ভূমিকা কী হওয়া উচিত। তো তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন তার জায়গায়। ওদিকে ক্লুসনার রান নিতে নন স্ট্রাইকে পৌঁছেছেন। অর্থাৎ, ব্যাটার দু’জনই তখন এক প্রান্তে। বাকি কাজটা সারলেন অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররা।
১৯৯২ সালে প্রায় বিশ বছর পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে এসে সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকার টার্গেট ছিল ২২ বলে ১৫। শুরু হলো বৃষ্টি। এরপর টার্গেট ৭ বলে ১৫। মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে আবার বৃষ্টি। টার্গেট হলো ১ বলে ১৫। যে দলের সঙ্গে এই কাণ্ড সেই ইংল্যান্ড ফাইনালে গিয়ে হারল পাকিস্তানের সঙ্গে।
২০০৩ সালে নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ ম্যাচ শ্রীলংকার সঙ্গে। এবারও বৃষ্টি। ডার্ক ওয়ার্থ লুইস নিয়মে ৪৫ ওভারে ২৩০ রানের টার্গেট দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু মাঠের ব্যাটার মার্ক বাউচার ড্রেসিং রুম থেকে বার্তা পেলেন তাদের করতে হবে মাত্র ২২৯। তাই ২২৯ রান হওয়ার পর শেষ বলটি আলতো টোকায় ঠেকালেন বাউচার। চাইলেই রান নিতে পারতেন, কিন্তু ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিবেচনায় বিরত থাকলেন। মাঠে-মাঠের বাইরে উদযাপনের পর জানা গেল, ড্রেসিং রুম থেকে বাউচারদের কাছে বার্তা পাঠানো শন পোলক ভুল জানতেন, আসলে লক্ষ্য ছিল ২৩০, অর্থাৎ একটি রান নিলেই হতো। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠেই সেই বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলেছিল কেনিয়া।
শুধু জেতা ম্যাচ হারা নয়, বিশ্বকাপে তীরে এসে তরী ডুবাও নয়, অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা প্রায়ই ঘটে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে।
সাউথ আফ্রিকার গায়ে ব্রিটিশ মিডিয়ার দেওয়া চোকার্স নামটি খোদাই করে লিখার সব দায়িত্ব সম্প্রতি কাঁধে তুলে নিয়েছে ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান মিডিয়া’। তাদের এ কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে তাবৎ উপমহাদেশীয় মিডিয়া।
২০১৯ বিশ্বকাপের সময় ক্রিকইনফোর ফিরুজ মুন্ডাকে দেখলাম শ্রীলংকান সহকর্মী ফার্নান্ডোজকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘বিশ্বকাপ বা আইসিসি ট্রফি তো নিউজিল্যান্ডও জিতে না। ওরা তো সেমি না শুধু, ফাইনালেও হেরেছে। তাহলে কেন সাউথ আফ্রিকাই শুধু চোকার?’ ফার্নান্ডোজের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘তোমাদের ব্যাপারস্যাপারই আলাদা….হে হে হে…’
এই আলোচনা সমারসেটে টন্টনে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলার দিন। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড কী করেছিল সেটা সবারই জানা। ক্রিকইনফোসহ তাবৎ গ্লোবাল মিডিয়া লিখল, ‘ইটস অ্যা বিউটিফুল গেইম অব ক্রিকেট অ্যাট ইটস বেস্ট’। অর্থাৎ, খেলা অসাধারণ হয়েছে কিন্তু কেউ চোক করেনি।
এসব দেখে দক্ষিণ আফ্রিকানরা কী ভাবে কে জানে। তারা নিজেরাই নিজেদের চোকার্স ডাকত মিডিয়ার সামনেই। ’১৫তে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের আগে র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এ বি ডি ভিলিয়ার্স হাসতে হাসতে মিডিয়ার সামনে বলছিলেন, ‘খোদার কসম, এবার আর চোক করব না।’
এরপর সেমিতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে গ্র্যান্ট ইলিয়টের (যিনি নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত) ছক্কার বাড়ি খেয়ে এবি যে কান্নাকাটি করলেন, সেই ছবি ক্রিকেট ইতিহাসেই মনুমেন্ট হয়ে গেছে। ওই বিশ্বকাপেই এবির রেকর্ড, দু’টি চারশো পার করা দলীয় ইনিংস সবই ছিল, কিন্ত আসল কাজ হয়নি।
ক্রিকেটে হেরে এরকম কান্নাকাটি করতে উপমহাদেশের বাইরে আমি কাউকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকান দল নিজেরাই মনে করে তারা চোকার্স।
পরদিন হিন্দুস্তান টাইমস আলাদা কলাম করল ‘চোকার্স ডিড ইট এগেইন’। অথচ নিজেরাও (ভারত) অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হেরে বাদ গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠিতে এই ভারতের রেকর্ড ভয়াবহ। গত ট্যুর বাদ দিলে ভারতের সবচেয়ে ভয়ংকর এওয়ে নেমেসিসের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে মহেন্দ্র সিং ধোনি হয়ে কোহলির প্রথম ট্যুরটাও ছিল যাচ্ছেতাই। টেস্ট তো বটেই, একদিনের খেলায়ও হোয়াইটওয়াশ আছে তিনবার। উল্টো দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতে খেলতে এসে নাগপুরে মিরপুরের চেয়েও জঘন্য পিচে ডেইল স্টেইন নেন ৭ উইকেট। সিরিজ ড্র হয় ১-১। খেলা বাদ দিয়ে ভারতীয় মিডিয়া হান্সি ক্রোনিয়ে ‘কেন যে ফিক্সিং করেছিলেন’ সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু করে।
যত যাই হোক, দক্ষিণ আফ্রিকার নামের সঙ্গে লেগে যাওয়া চোকার্স শব্দটি আর বাদ পড়ে না। বাংলাদেশের মিডিয়া ভুলে যায় তাদের আদরের টাইগার দল কত বার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার সঙ্গে গত সাত বছরে চোক করেছে। তাও সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকগুলোর হেডলাইন ‘আবারো চোক করল আফ্রিকা, ফাইনালে অমুক…।’
এদেশের ফেসবুক এক্টিভিস্টরা সাউথ আফ্রিকাকে ডাকে ‘সাথাফ্রিকা’। তাদের কাছে এই দল একটা লুজার দল—যে কিছুই পারে না আসলে। অথচ এই বছরের আগেও ফুটবলে আর্জেন্টিনার ভাবমূর্তি ছিল আকাশছোঁয়া। গত প্রায় তিন দশক সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট টিমের চেয়ে অনেক খারাপ পারফর্ম করেও আর্জেন্টিনার ভাবমূর্তি কোনো অংশে কখনও ক্ষুণ্ণ হয়নি।
উপমহাদেশের সব ধরনের স্পোর্টস ফ্যানরা আবেগপ্রবণ। খেলাকে তারা রাজনীতির সঙ্গে মেশাতে চায় না। কিন্তু কোনো কিছুর সঙ্গে মেশাতেও বাকি রাখেনি। দুই দশক আগেও পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ব্যাপক জনপ্রিয়তার মূল কারণ ছিল ধর্মের নৈকট্য। পুরা উপমহাদেশে ফুটবলে আর্জেন্টিনার সাপোর্টের কারণ ম্যারাডোনা-মেসি। এখন পারফরমেন্সও হয়ত এসব আলোচনাকে দূরে ঠেলছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাপোর্ট করার কারণ হিসেবে বলা হতো ‘আমাদের মতো কালো মানুষের দল!’ আমরা কবে কালো ছিলাম কে জানে? এমনকি লিভারপুল সাপোর্টারদের বিভিন্ন সময় কলাম লিখে বলতে শোনা গেছে ‘এরা শ্রমিক শ্রেনির শহর থেকে উঠে এসে ফুটবল খেলে।’ ফুটবলে ব্রাজিল আর ক্রিকেটে উইন্ডিজের একাধিপত্য কমলেও সমর্থন কমেনি। আমাদের দেশে জাতিগতভাবে ব্যাপক ভারত বিরোধিতার মাঝেও তাদের সমর্থনও গত দুই দশকে লক্ষণীয় বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে তাদের তারকা আর ব্রডকাস্ট ব্র্যান্ডিং। আর ‘সুন্দর’ খেলা উপহার দেওয়ার জন্য নিউজিল্যান্ড, দানবীয় খেলার জন্য ইংল্যান্ড আর ‘প্রফেশনাল’ খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়ারও অনেক সমর্থক আছে।
কিন্তু সাদা-কালো মিলিয়ে বর্ণনিরপেক্ষ দল, কালোদের প্রাধান্য দেওয়া, হাশিম আমলা ইমরান তাহিরদের মতো দারুণ প্র্যাকটেসিং মুসলিম আর অহরহ দুর্দান্ত খেলা উপহার দেওয়ার পরেও প্রটিয়াসরা গ্লোবাল ফ্যানদের মনে জায়গা কেন করতে পারেনি, সেটা নিয়ে একটা গবেষণা হতেই পারে কিন্তু।
ছেলেদের বিশ্বকাপ না জিতলেও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঢাকার মাটিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আমাদের মতোই পিচ্চিদের বিশ্বকাপ জিতেছে তারা দুইবার। এবার মেয়েদের বিশ্বকাপ জেতার প্রায় কাছাকাছি গিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পারেনি।একই সঙ্গে টেস্ট ওডিআই এবং টি-২০ র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসা প্রথম দল সাউথ আফ্রিকা। ইংল্যান্ড ছাড়া এই কীর্তি সম্ভবত আর কারো নেই।
এককালে সকলের বধ্যভূমি অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে দুর্ধর্ষ ফলাফল কেবল তাদেরই আছে। আছে অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপ জয়ের বিরল রেকর্ড। টেস্টে টানা তিনটি এওয়ে সিরিজ জয়। পার্থে চতুর্থ ইনিংসে চারশো চেজ করে জেতা থেকে শুরু করে অ্যাডিলেডে পাঁচ সেশন ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচানোর মতো সব ঘটনাই তাদের দখলে। ডি ভিলিয়ার্স দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডের পর সাড়ে তিনশ বল খেলে এক দশমাংশ রান করেই বোধ হয় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ‘চোকার্স ডি এন এ’ আসলে কী। নিজেদের দেশে প্রায় অপ্রতিরোধ্য ছিল, বিশেষ করে উপমহাদেশের দলগুলোর সঙ্গে টানা প্রায় বিশ বছর অজেয় ছিল। পাকিস্তান দুই দফায় টেস্ট আর ওডিআই দু’টোতেই হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছিল। কুশল মেন্ডিজের অতিমানবীয় কিংবা দানবীয় ব্যাটিংয়ে সেই শাসনের ইতি ঘটে।
এই দলটায় এ বি ডি ভিলিয়ার্সের মতো সর্বকালের সেরা তালিকায় থাকা খেলোয়াড় রয়েছেন। ক্যারেক্টারের অভাব নাই। শেষ ত্রিশ বছর ধরলে সাত আট দলের চেয়ে বেশি ক্রিকেট ক্যারেক্টার প্রডিউস করেছে তারা। ডেল স্টেইনের মতো ফাস্ট বোলার, হাশিম আমলার মতো ডেকোরেটেড ব্যাটার ক্রিকেট দুনিয়ায় বিরল।
কিন্ত এত কিছুর পরেও ‘চোকার্স রা চোকার্স ই আসলে।’
ক্রিকেটে মাঠের বাইরে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার অদ্ভুত নিয়ম আছে। যখন দেশটা সাদারা চালাত তখন বর্ণবাদী আচরণের জন্য তাদের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধই করে দেওয়া হয়। প্রথম চারটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতেই পারেনি তারা। ক্লাইভ রাইসের নেতৃত্বে কলকাতা টেস্টে ফেরত আসার পরপরই আবার বিশ্ব ডমিনেট শুরু করে। অথচ নিষিদ্ধ থাকা সেই ২০ বছরে সাউথ আফ্রিকা গ্রাহাম পোলক, মাইক প্রোক্টরদের সময়ে বিশ্বসেরা দল ছিল। কেপলার ওয়েসেলস অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে সাউথ আফ্রিকায় ফেরত এসে অধিনায়ক হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্ত সেই ২০ বছরে অসংখ্য সাদা চামড়ার ওয়ার্ল্ডক্লাস প্লেয়ার সাউথ আফ্রিকা ছেড়ে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে চলে যান। গেছেন নামিবিয়া, হল্যান্ড আর জিম্বাবুয়েতেও।
এদের মধ্যে এ বি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে শুধু যদি ইংল্যান্ড চলে যাওয়া কেভিন পিটারসনকে সাউথ আফ্রিকা পেত, তাহলে ব্যাটিং লাইনআপ কেমন হতো?
এখনও সাউথ আফ্রিকা ছেড়ে খেলোয়াড়রা যাচ্ছেন। তবে সম্পূর্ণ উল্টো কারণে। কালোরা ক্ষমতায় এসে এবার নিয়ম করেছে কালার ব্যাল্যান্স করতে হবে। ব্যাল্যান্সের নাম দিয়ে তারা সাদাদের একটা কোটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। মেরিটের চেয়েও এখানে এখন কাউন্টার রেসিজম চলছে। এ কারণে কাল্পাক ডিল নিয়ে ফ্রন্ট লাইনার সাউথ আফ্রিকান সাদারা দলে দলে ইংল্যান্ডে চলে গেছেন কাউন্টি খেলতে, জাতীয় দলে না খেলার শর্তে। রাইলি রুশো ছাড়া কেউ ফেরতও আসেননি। কালোরা এই বর্ণবাদ করছে বলে উপমহাদেশের মিডিয়া নীরব। শুধু নীরব না, তারা মহাখুশী। টেম্বা বাভুমা দুবাই বিশ্বকাপে ভয়াবহ খেলার পরেও এখানকার মিডিয়া লিখেছে ‘সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেটের কালো মানিক।’ কিন্ত হেরে যাওয়ার পর আবার বলেছে ‘চোকার্সরা পারল না।’
সাউথ আফ্রিকা উপমহাদেশের মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট আর সাধারণ ফ্যানদের কাছে ‘আহা উহু’ পাওয়া একটা ‘লুজার’ দল, যারা খুব ‘বিউটিফুল’ ক্রিকেট খেলে না নিউজিল্যান্ডের মতো, আবার ‘বলা যায় না ভাই কী যে আনপ্রেডিক্টেবল!’ পাকিস্তানের মতো। কিন্ত ক্রান্স খেলায় হেরে বাদ পড়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকার পরেও তারাই একমাত্র চোকার্স।
এই চোকার দলটির অফিসিয়াল সাফল্যে বিশ্বকাপ না থাকলেও অসংখ্য রেকর্ডের সঙ্গে দুই দুইটা বড় বিশ্বরেকর্ড আছে। সাদা বলের খেলায় রান তাড়া করে জেতার দু’টি বিশ্বরেকর্ডই তাদের। ২০০৬ সালে জোহানসবার্গের ১৭৫ ডেস্ট্রয়ার হার্শেল গিবসের হাত ধরে ৪৩৪ চেজ করে ৪৩৮ করার পর আজ সুপার স্পোর্টস পার্কে টি-২০ ম্যাচে কুইন্টন ডি ককের ৪৪ বলে ১০০ করা ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৫৮ রান তাড়া করে সাত বল হাতে রেখেই জয়। ৪৩৪ এর দিনের রিকি পন্টিংয়ের মতো আজকেও জন্সটন চার্লস চাপা পড়ে যাবেন ক্রিকেটের অসাধারণ কিছু মুহূর্তের সমষ্টি যোগ করা সাউথ আফ্রিকার কাছে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের শক্তি যাই হোক, যে কোনো দিন যে কোনো মাঠে যে কোনো শক্তির প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচে ২৫৮ করতে ম্যাজিক লাগবেই। চোকার্স সাউথ আফ্রিকা নিচু সারির ‘শূদ্রদের’ মধ্যে জনপ্রিয় হতে শুরু করা ক্রিকেট রেকর্ডকে বুলগেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে আবার এলিটদের কাতারে নিয়ে এসেছে।
সাউথ আফ্রিকা তাই আসল আনপ্রেডিক্টেবল দল। বিগ থ্রির নানা ম্যাকানিজমের বিরুদ্ধে মাথা তুলে রাখা একমাত্র দল যারা নিউজিল্যান্ডের চেয়েও এফটিপিতে কম খেলা পায়। নিজেদের ক্রিকেট বোর্ডের নানা ধরনের অন্যায় নিয়মের পরেও যে কোনো দিন বিশ্বরেকর্ড হাসতে হাসতে ভাঙতে পারে কোনো প্রত্যাশা ছাড়াই, এমন একটা দল। যেই দলে এখন আর কোনো সুপারস্টারও অবশিষ্ট নেই।
চোকার্স নাম অচিরেই ঘুচবে বলে মনে হয় না। কিন্ত ডি ভিলিয়ার্সদের কান্নাকাটির পাশাপাশি থামবে না নতুন নতুন বিশ্বরেকর্ডও।
বিগ থাম্বস আপ চোকার্স।
লেখক: ম্যানেজিং এডিটর, সারাবাংলা
সারাবাংলা/আইই
দক্ষিণ আফ্রিকা চোকার্স রফিক উল্লাহ রোমেল সাউথ আফ্রিকা সাউথ আফ্রিকা চোকার্স