Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা সেবায় সর্বোচ্চ ফি ৫০০ টাকা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ মার্চ ২০২৩ ১৯:২৮

ঢাকা: সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের বিকেলেও ব্যক্তিগত রোগী দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ভিজিটের মাধ্যমে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন। একইভাবে থাকছে ছোট-খাটো সার্জারির পাশাপাশি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্টের ব্যবস্থাও। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ১০ জেলা ও ২০ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ৩০ মার্চ বিকেল থেকে এই সেবা দেওয়া শুরু হবে।

বিজ্ঞাপন

বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত রোগীরা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা ফি দিয়ে নিতে পারবেন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের সেবা। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ফি দিয়ে রোগীরা সেবা পাবেন এমবিবিএস বা বিডিএস বা সমমনা ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের কাছ থেকে। এছাড়াও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি সেবার ফিও। এক্ষেত্রে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সার্জনের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

সোমবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সরকারি চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে সেবা দেন। তারপর সিনিয়র চিকিৎসকরা হাসপাতালে থাকেন না। এরপরেও অনেক মানুষের চিকিৎসা পরামর্শ ও টেস্টের প্রয়োজন হয়। এতে বিকেলে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে না পেরে বাইরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে দেখান। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ফি বেশি হওয়ায় দেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।’

চিকিৎসক না থাকায় অনেক মানুষের কষ্ট হয়, আমরা সেই কষ্ট লাঘবের জন্য এই দ্বিতীয় শিফট চালু করেছি বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জাহিদ মালেক বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৩০ মার্চ থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করব। চিকিৎসকরা প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস এখানে করবেন সরকারি হাসপাতালে। প্রথমে আমরা কয়েকটি জেলা হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু করব। ১০টি জেলা হাসপাতালে এবং ২০টি উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম কেমন চলছে তা আমরা দেখব। সেখানে যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, আমরা সেটা সংশোধন করে পর্যায়ক্রমে ৫০০টি উপজেলা এবং ৬৪ জেলায় বাস্তবায়ন করব। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে চেম্বার করবেন। তাদের এই সেবা দেওয়ার জন্য সম্মানি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সম্মানির একটি অংশ চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং আরেকটি অংশ হাসপাতাল পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসাসেবা পরামর্শের পাশাপাশি ছোটখাটো সার্জারি, ডায়াগনস্টিক/ক্লিনিক্যাল/প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্টসহ বিভিন্ন রকম পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেগুলোর জন্যেও মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেখান থেকেও খরচের অংশ পাবে হাসপাতাল। আপাতত আমরা এভাবেই কাজটি শুরু করতে যাচ্ছি।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই সেবার জন্য একজন অধ্যাপকের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এর মধ্যে ৪০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন, সেবার সহায়তাকারী পাবেন ৫০ টাকা এবং হাসপাতাল পাবে ৫০ টাকা। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। এর মাঝে চিকিৎসক পাবেন ৩০০ টাকা। সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট, বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী চিকিৎসকের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা, যার ২০০ টাকা চিকিৎসক পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘এমবিবিএস বা বিডিএস বা সমমনা ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের ফি ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৫০ টাকা চিকিৎসক পাবেন। বাকি টাকা সার্ভিস চার্জ বাবদ কাটা হবে এবং চিকিৎসকদের সহায়তাকারীরা পাবেন। এক্ষেত্রে নার্স ও টেকনিশিয়ানরাও সপ্তাহে দু’দিন করে কাজ করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগে ছোট সার্জারির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ফি ৮০০ টাকা এবং সার্জারির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ফি এক হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দুই-তিন মাস ধরে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা ছিল, এ টার্মের শুরুতেই ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করা হোক। কিন্তু ডেঙ্গু ও করোনার কারণে তা আমরা করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমরা আস্তে আস্তে সব জেলা ও উপজেলায় শুরু করব।’

সরকারি চিকিৎসকদের সপ্তাহে কয়দিন করে ডিউটি থাকবে?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে মাত্র দুইদিন অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে। তবে, এই সেবা যাতে মানুষ সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন নিশ্চিত করে পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত ২২ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন চিকিৎসক পেশাজীবী সংগঠনসহ, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিস বিষয়ক একটি জরুরি সভায়’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন নির্ধারিত কর্মঘণ্টা শেষে আগামী ১ মার্চ থেকে নিজ কর্মস্থলেই সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন।

ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস কার্যক্রম শুরু হলে রোগীরা বেশি চিকিৎসা পাবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে চিকিৎসকরাও রোগীদের সেবা করার বেশি সুযোগ পাবেন।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

ফি বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর