রোজার প্রথম কর্মদিবসে তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী
২৭ মার্চ ২০২৩ ১৯:৩৫
ঢাকা: টানা তিনদিন সরকারি ছুটির পর রোজায় প্রথম ভয়াবহ যানজট দেখলো রাজধানীবাসী। সকাল থেকেই অফিসগামী আর মার্কেটমুখী মানুষ নেমে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটও বাড়তে থাকে। দুপুর ১২ টা থেকে ১টার দিকে কিছুটা গাড়ির চাপ কম থাকলেও বেলা ২টার পর থেকে ভয়াবহ আকার ধারণ করে সড়কগুলো। বাস, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান একাকার হয়ে যায়। বেলা ৩টার দিকে অফিস ছুটির পর সড়কে যেন গাড়ির স্রোত নামে। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরের পর রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, রামপুরা, ধানমন্ডি, মহাখালী, বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, উত্তরা, বাড্ডা ও কালশী এলাকা ঘুরে রাজধানীতে যানজটের চিত্র দেখা যায়। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গুগল চিত্রে দেখা যায়, রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক লাল দেখাচ্ছে। অর্থাৎ যানজট রয়েছে। আবার যেখানে গাড়ি মোটামুটি সচল রয়েছে সেখানে হলুদ দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে, রমজানেও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে চলছেন অভিভাবকরা। অফিসগামী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সকাল থেকেই হাজারো শিক্ষার্থী-শিক্ষকের যাতায়াত শুরু হয়। বাড়তি মানুষের চলাচল রাজধানীর সড়কের যানজটে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
কাকরাইল মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আতাউর রহমান বলেন, ‘গত তিনদিনে খুব ভালোভাবে ডিউটি করেছি সবাই। কিন্তু আজ সকাল থেকে গাড়ি আর রিকশার চাপে হিমশিম খাচ্ছি। দুপুরের পর গাড়ির চাপ যেমন বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের সংখ্যাও। ইফতারের আগে যানজট নিরসন করতে আমরা সবরকম চেষ্টা করছি।’
ট্রাফিক গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অন্যদিনের তুলনায় গাড়ির চাপ আজ একটু বেশি। তিনদিন বন্ধ থাকার পর আজ রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। এছাড়া রমজানের কারণে অফিস টাইম একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাই এ যানজট।’
জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘রোজার মাস এলেই ঢাকা শহরে যানজট বেড়ে যায়। যানজট নিরসনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশসহ থানা পুলিশের সদস্যরাও সড়কে বাড়তি ডিউটি করেন। কিন্তু সড়কের দুই পাশ দিয়ে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাথ দখলসহ যত্রতত্র গাড়ি চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসন পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যারা সড়কে চলাচল করি এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
অন্যদিকে, রমজান শুরুর আগে যানজট নিরসনে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনাগুলো হলো-
১. ঢাকা মহানগরীতে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে কোনো বাসই সড়কে রেখে বা থামিয়ে যাত্রী ওঠানো যাবে না। টার্মিনালের ভেতরে থাকা অবস্থায় যাত্রীদের বাসের আসনগ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
২. ঢাকা মহানগরীতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবে না।
৩. ভ্রমণকালে ঢাকা মহানগরের প্রবেশ ও বাহির পথের গণপরিবহনগুলো শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে যেন কোনো অযাচিত যানজটের সৃষ্টি না হয়।
৪. ঢাকা মহানগরী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে নিবৃত থাকতে হবে।
৫. আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রীরা বা গমনপ্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
৬. ঢাকা মহানগর থেকে দূরপাল্লার রুট পারমিটবিহীন বা অননুমোদিত রুটে কোনো বাস চলাচল করবে না। বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন।
৭. বাসের ভেতরে যাত্রীদের অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
৮. সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা অবশ্যই যানবাহনে টিকিট সঙ্গে রাখবেন।
৯. যাত্রীদের মালামাল নিজ হেফাজতে সাবধানে রাখবেন।
১০. কোনো যানবাহনেই ছাদের ওপর অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না।
১১. যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসচালকরা এমন কোনো অসম প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না। এতে সড়কের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটে ও জীবনহানির শঙ্কা থাকে।
১২. সকালে অফিসে গমনকারীদের পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে রেব হওয়া।
১৩. ইফতার সন্নিকটে বাসায় রওয়ানা না দিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া।
১৪. স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজি, বাস ইত্যাদি বাহন ব্যবহার না করে হেঁটে যাওয়া।
১৫. টার্মিনালভিত্তিক কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করতে হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে