নোমানের সঙ্গে ৩০ নেতা, ইসি’র আদেশ লঙ্ঘন
২৭ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অন্তত ৩০ জন নেতা নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। এতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা লঙ্ঘন হলেও উচ্চবাচ্য করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে নগরীর লাভ লেইনে উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন মোট ছয় জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ চারটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া দু’জনও আছেন।
নোমান আল মাহমুদ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বাকিরা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) কামাল পাশা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দীন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মো. ফরিদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ রমজান আলী।
কর্ণফুলী নদীপাড়ের বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ এবং শহরের চান্দগাঁও ও বাকলিয়া-পাঁচলাইশের একাংশ নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন ১৮ জন। তবে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় পার্টিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ মনোনয়নপত্র নেয়নি।
মনোনোয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে কমপক্ষে ৩০ জন নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সংক্রান্ত আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে পাঠানো ছবিতেও অন্তত নয় জনকে দেখা গেছে। সারাবাংলা’র তোলা ছবিতে দেখা গেছে ২৮ জনকে। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষের ভেতরে ও বাইরে আরও অন্তত ২০-৩০ জনকে দেখা গেছে, যারা নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে নির্বাচন কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
নোমান আল মাহমুদের সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নগরের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল এবং বোয়ালখালী উপজেলার সভাপতি নুরুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজাকে দেখা গেছে।
এছাড়া নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, দক্ষিণের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন, বোয়ালখালীর পৌর মেয়র ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম জহুর, বাঁশখালী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছির আরাফাতকেও দেখা গেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে।
জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় আমরা প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচ থেকে সাত জনকে অ্যালাউ করি। এর থেকে একজনও বেশি থাকার সুযোগ নেই। আজ (সোমবার) সমস্যা যেটা হয়েছে, দুপুরের পর সব প্রার্থী একসঙ্গে এসে ভেতরে ঢুকে যান। এ কারণে কে কার সঙ্গে এসেছেন সেটা আমরা আলাদা করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার কয়েকজন সাংবাদিকও ছিলেন।’
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নোমান আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার দুই পূর্বসূরি প্রয়াত মঈনুদ্দীন খান বাদল ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদ কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। আমি নির্বাচিত হলে সেতু বাস্তবায়নে সচেষ্ট হব। এই অঙ্গীকার পালনে আমি অবশ্যই আমার সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করব।’ এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা ছিলেন তাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৯ মার্চ এবং প্রত্যাহার করা যাবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ৬ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৭ এপ্রিল ভোটগ্রহণ হবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ। এর আগের সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে মোছলেম উদ্দিন সংসদ সদস্য হন। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম