Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের ক্ষমতা পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাতিয়ার’ জামায়াত

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
২৮ মার্চ ২০২৩ ২০:০৭

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ডানপন্থী ইসলামী মৌলবাদী বা ‘মোল্লাদের’ খুব পছন্দ করে। ১৯৫০ সালে ইরানের তেলশিল্প যখন জাতীয়করণ করা হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে হুমকি হিসেবে নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় তারা ইরানের ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ সরকারের পতন ঘটাতে মৌলবাদীদের ব্যবহার করেছিল।

আফগানিস্তানের সাওর বিপ্লব দেশটির নারীমুক্তি ও গোষ্ঠীভিত্তিক সামন্তবাদের অবসান ঘটিয়েছিল। আফগানিস্তানকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণায় এই বিপ্লব ভূমিকা রেখেছে। এই বিপ্লবের অর্জনকে ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) পাকিস্তানের মদদপুষ্ট ও আশ্রিত মৌলবাদীদের ব্যবহার করেছিল। এমনকি ভারত আক্রমণে বা ১৯৭১ সালের বাঙালি অভ্যুত্থান দমনে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে এই মৌলবাদীদের দিয়ে সমর্থন জুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এছাড়া নব্বইয়ের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি মেকি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল যে, সাদ্দাম হোসেন গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইরাক আক্রমণ করে তারা সাদ্দামের পতন ঘটায়। এর ফলাফল দাঁড়ায় ধর্মনিরপেক্ষ তথা স্বৈরাচারী বাথ পার্টি বিলুপ্তি হয়। আর এর মধ্য দিয় সৃষ্ট শূন্যতায় আইএসআইএস’র উত্থান ঘটে।

মার্কিন মদদপুষ্ট আরব বসন্ত হোসনি মোবারকের ‘পুলিশি রাষ্ট্র’র পতন ঘটিয়ে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’কে ক্ষমতায় আনে। জেনারেল ফাতেহ আল সিসি মিশরের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু আশরাফ ঘানির মতো উদারপন্থী দিয়ে তালেবানদের বাইরে রাখার মার্কিন প্রচেষ্টা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, ওয়াশিংটন তালেবানদের সমর্থন করার পাশাপাশি ন্যাটো বাহিনীকে রসদ ও নির্বাচনি বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সহায়তা করেছে।

তবে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি থাকার পরও বিশ্বজুড়ে অসামঞ্জস্য প্রচারাভিযানের লড়াইয়ে মার্কিনিরা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, তারা বল প্রয়োগে অত্যধিক জোর দেয় এবং রাজনীতিতে তাদের বিভ্রান্তিকর দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

ইসলামিক বিশ্বে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় তাৎক্ষণিক কৌশলগত লাভের জন্য মৌলবাদী বা মোল্লাদের বেছে নিয়েছে। কিন্তু এই মৌলবাদীরাই তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ওসামা বিন লাদেন।

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

১/১১-এর সময় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তাদের ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চলেছে। আর এটি ভারত সহ্য করবে না। হিলারিকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে, মাইনাস টু ফর্মুলার সিদ্ধান্ত ভুল। এবং বাংলাদেশে ইসলামিক মৌলবাদীদের বাঙালি জেনারেলের পরিবর্তে ‘দেশীয় ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির’ সঙ্গে লড়াই করতে হবে।

এই আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে মুখার্জি বিজয়ী হন এবং বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, যা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার স্মৃতিকথা ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’-এ এসব বর্ণনা করেছেন।

এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সুশীল সমাজ’ পরিসংখ্যান, আমলাতন্ত্র থেকে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দল থেকে সামরিক বাহিনী এবং গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে শাসন পরিবর্তনের পুরানো দুষ্টুমিতে ফিরে এসেছে। সমস্যা হলো- যুক্তরাষ্ট্র খুব কমই নতুন উদ্ভাবনী অপারেশনাল পরিকল্পনা তৈরি করে। বরং তারা একটি স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য বিষয়ের সঙ্গে লেগে থাকতে পছন্দ করে।

বর্তমানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা ২০১৩ সালের ইউরোমেইডেন মডেল অনুসরণ করছে। যে মডেলটি ইউক্রেনে খুব ভালো কাজ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকেই বাংলাদেশে এটি প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বাস্তবতা হলো- ইউক্রেনে যা কাজ করে তা বাংলাদেশে নাও করতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটনের নাইট চার্লাটানসরা প্রায়ই আঞ্চলিক বিশেষত্ব ভুল করে ফেলে।

সর্বশেষ মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমের একটি অংশ। এটি এমন এক সময় দিয়েছে যার মাধ্যমে উগ্রপন্থী দল জামায়াত ইসলামীকে উৎসাহিত করতে চায়। এবং একই সময়ে এটি আহমেদিয়াদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা চালিয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছে। যে কারণে তারা তাদের বাক স্বাধীনতা ও সভা সমাবেশের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেনি। এছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এমনকি দলটির নামে অফিস বরাদ্দও নিষেধ করা হয়েছে।’

হাস্যকরভাবে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এসব বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখছে না, যা আহমেদিয়া সম্প্রদায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে উত্থাপন করেছিল। তারা বলেছিল, ‘পাকিস্তানপন্থী দল মৌলবাদী একটি দল আহমদিয়া বয়কট প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সরকারকে তাদের ‘অনইসলামিক’ হিসেবে ঘোষণার জন্য চাপ দিচ্ছে।’

এদিকে, আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রদূত হাস তাদের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় জামায়াত মদদপুষ্ট বিদ্বেষমূলক প্রচারণার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছিল। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রদায়িক বিবৃতি সম্পর্কেও বলা হয়েছিল।’

হামলার কয়েকদিন পর ৫ মার্চ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম এক বিবৃতি জারি করে। সেখানে আহমেদিয়া সম্প্রদায়কে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। এছাড়া, বাশেরকেল্লা নামে জামাত-সমর্থিত টুইটার গ্রুপে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ঘৃণ্য বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালায়। সেখানে আহমেদিয়াকে বয়কট করার জন্য কয়েকটি টুইট করা হয়েছে।

মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে বিতর্কিত অধিকারকে একটি ‘স্বাধীন সংস্থা’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। যার প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান শুভ্র। তিনি বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় (২০০১-০৬) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের উগ্র কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের সময় হতাহতের পরিসংখ্যান নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ায় ‘অধিকার’। ফলে জামায়াতসহ বিরোধীদলগুলো সেখানে যোগ দেয়। এমনকি তারা রাজধানী অবরোধের অঙ্গীকার করেছিল।

জাতিসংঘের মুখে চুনকালি পড়ে যখন তাদের প্রতিবেদনে জোরপূর্বক গুমের তালিকায় ঢালাওভাবে সুস্থ সবল ভারতীয় বিদ্রোহীদের নাম উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনটিও অধিকার ও তার ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।

মার্কিন প্রতিবেদনে জামায়াতের প্রধান মিত্র বিএনপি সম্পর্কেও বেশকয়েকটি কথা আছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘তাদের (বিএনপি) বাক স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে এবং সমাবেশ করার স্বাধীনতাও নেই। কিন্তু প্রতিবেদনে এই দলটির দ্বারা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উপর আক্রমণ এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ব্যাপারগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’

এসব কারণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া দেখাতে উসকানি দিয়েছে। তাদের এই প্রতিক্রিয়াগুলো বৈধ। কিন্তু এসব ব্যাপারে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি সুলতানা কামালের বক্তব্য ওয়াশিংটনকে একধরনের আত্মদর্শনে বাধ্য করবে বলে আশা করি।

সুলতানা কামাল এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে জামায়াত ইসলামীকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এটি এমন এক রাজনৈতিক দল যাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, অপহরণ, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাসহ পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের সহযোগিতা করার প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে।

এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, আল বদর ও আল-শামস নামে দলটির সামরিক শাখা ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত। আমি ১৯৭১ সালে গণহত্যার বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের যোগাযোগের নথি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন পেশ করতে চাই। এসব নথিপত্র দেখলে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় মাস বাংলাদেশে গণহত্যার সময় জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল তা কারও বুঝতে অসুবিধা হবে না।

একটি আইনের মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি এটাও জিজ্ঞেস করতে চাই যে, নাৎসি পার্টিকে কি জার্মানিতে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে?

‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্রুটিপূর্ণ ছিল’- তা কিসের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। যেহেতু যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কোনো কোনো মহল কেন এমন মন্তব্য করছে তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আমি দেখিনি; তাই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যাই হোক, ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা হলো, অভিযুক্তের আত্মরক্ষার অধিকারকে তারা সম্মান করেছিল।

এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি চায় যে, আমরা জিল্লুর রহমানের সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজকে সুলতানা কামাল পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বাস করব- তাহলে তারা নিরর্থক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা জানি, জিল্লুর রহমান কীভাবে আইএসআই’র অর্থায়নে পাকিস্তানের মাটিতে একজন যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর এক আত্মস্বীকৃত খুনির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। জিল্লুর রহমানের টিভি শো এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মূল্যবান। কারণ, তিনি বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে আরও কয়েক জনের মতো ভূমিকা পালন করতে চায়।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও অভিনেত্রী তারানা হালিম সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘হাসিনা সরকারকে হেয় করার মার্কিন এজেন্ডা এতটাই প্রাধান্য পেয়েছে যে, জামায়াতের মতো একটি বিপজ্জনক গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে তারা। জামায়াত ২০০১ সালে আমাকে প্রায় মেরে ফেলেছিল। কারণ, আমার উদারপন্থী মতাদর্শ তাদের (জামায়াত) কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই কার্যনির্বাহী সদস্য বলেন, ‘পশ্চিমারা নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে। তারাই আবার জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি দলকে সমর্থন করে। যে জামায়াত বাংলাদেশে শরিয়া আইন জারি ও লিঙ্গ অধিকার খর্ব করতে বদ্ধপরিকর।’

আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী শাহানাজ পারভিন ডলি বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমে বলেন, ‘পশ্চিমা ভণ্ডামি খুবই স্পষ্ট ও বিরক্তিকর। তারা এর বাইরে বের হতেই পারে না।’

যুব মহিলা লীগের সাবেক এই যুগ্ম সম্পাদক বলেন, ‘পশ্চিমারা বাংলাদেশে সমঝোতার কথা বলে। এটা অসম্ভব। যে জামায়াত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল, জনগণের ওপর বিশেষ করে নারীদের ওপর ভয়ংকর বর্বরতা চালানোর জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাশে ছিল- আমরা কিভাবে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারি? একজন বাঙালি নারী হিসেবে তাদের প্রচেষ্টা কখনই মেনে নেব না। আমরা আমাদের দেশকে আরেকটি আফগানিস্তান হতে দিতে পারি না।’

দেশের বিশিষ্ট অধিকার কর্মীদের মতে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অর্থাৎ তারেক রহমান ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন অর্থপাচার ও নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তারেক এখন লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছেন। তিনি একটি অঙ্গীকারনামা জমা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন। তারেক রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের জন্য একটি অভয়রাণ্যে পরিণত হয়েছিল। তখন জঙ্গিরা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একটি অবাধ রাজত্ব উপভোগ করেছিল। মৌলবাদীদের সম্পৃক্ত করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। যেখানে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।

বিএনপির হুমকি ও সহিংসতার মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সতর্কবাণী দেওয়ার মতো বিষয়গুলো না থাকার কারণে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন প্রতিবেদনটি ফাঁপা।

১৯৫০ এর দশকে ইরানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগকে ক্ষমতাচ্যুত করা থেকে শুরু করে আফগান জিহাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কট্টর ইসলামপন্থীদের ব্যবহার, সৌদি আরবের পশ্চাদমুখী শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করা পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসলামী বিশ্বের প্রগতিশীল শক্তিকে পরাজিত করে শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের অভিযানে মৌলবাদী শক্তিগুলোকে ব্যবহার করে থাকে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় গামাল নাসের, সাদ্দাম হোসেন বা মোসাদ্দেগের মতো আরব বা পারস্য জাতীয়তাবাদীরা ওয়াশিংটনের প্রধান শত্রু ছিল। মাঝে মাঝে চিত্রনাট্যটি ওয়াশিংটনের অনুকূলে যায়নি। যেমন- ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের মতো আগ্নেয়গিরির ঘটনা ঘটেছিল, বা ১৯৯৬ সালে তালেবানরা আফগানিস্তান দখল করেছিল।

আমাদের মতো যারা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরের ঘটনাগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে কভার করেছেন, তারা মার্কিন নীতিতে ধারাবাহিকতা খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমে তারা রক্তপিপাসু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। এর পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় ওয়াশিংটনের গোপন সমর্থন ছিল। নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটির কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ‘সোভিয়েত-ভারতীয় প্রক্সি’। তাই নাসেরের মতো আরব জাতীয়তাবাদীদের প্রতি ওয়াশিংটনের মনোভাবের মতোই সহজে মুজিব ও শেখ হাসিনার মতো বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের প্রতি তাদের অবিশ্বাস তৈরি হয়।

সুতরাং, মানবাধিকার প্রতিবেদনে জামায়াতের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল সমর্থন বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী শক্তিকে সমর্থন করে। আর এই বিষয়টি আমেরিকান নীতির একটি উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিকতা বলে প্রমাণিত। ইন্দিরা গান্ধি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা গামাল নাসেরের মতো আবেগপ্রবণ জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সবসময়ই সমস্যা ছিল। বিপরীতে সৌদি আরব বা পাকিস্তানের মতো পশ্চাদ্গামী শাসনব্যবস্থা সবসময়ই পশ্চিমা কৌশলগত স্বার্থকে সন্তুষ্ট করে থাকে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে বলা যায়, সাবেক ব্যবসায়ী ও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী লবি ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে তিনি এই চুক্তি করেন।

[ বি. দ্র.: লেখাটি ইন্ডিয়া টুডে থেকে নেওয়া]

লেখক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে লেখা মিডনাইট ম্যাসাকারের লেখক। তিনি একজন বিশিষ্ট কলামিস্ট। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

সারাবাংলা/আইই/পিটিএম

জামায়াত যুক্তরাষ্ট্র সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর