বাংলাদেশে ২০ শতাংশ অকাল মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণ দায়ী: বিশ্বব্যাংক
২৮ মার্চ ২০২৩ ২১:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশে ২০ শতাংশ অকাল মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণ দায়ী। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশ তাদের নীতিমালা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে এলে এসব অঞ্চলে বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ: এভিডেন্স অ্যান্ড প্রোগ্রেস ফর মাল্টি-সেক্টরাল অ্যাপ্রোচ, সল্যুশনস ফর ক্লিন এয়ার’ শীর্ষক আয়োজিত এক কর্মশালায় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে উত্থাপিত এক রিপোর্টে এসব তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় ‘স্ট্রাইভিং ফর ক্লিন এয়ার: সাউথ এশিয়া’স কোলাবোরেটিভ রেসপন্স’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে বলা হয়, সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং দরিদ্র অঞ্চলে কিছু সূক্ষ্ম কণা, যেমন- কাচ এবং ছোট ধূলিকণার ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছর আনুমানিক ২ মিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটায়। এই ধরনের চরম বায়ুদূষণের সংস্পর্শে শিশুদের মধ্যে স্টান্টিং এবং হ্রাসকৃত জ্ঞানীয় বিকাশ থেকে শুরু করে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং দীর্ঘস্থায়ী ও দুর্বল রোগের প্রভাব রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধিসহ দেশের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কর্মঘণ্টা নষ্ট করে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি প্রধান এয়ারশেড চিহ্নিত করা হয়েছে- যেখানে বাতাসের গুণমানে আত্মনির্ভরতা বেশি। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান, ইন্দো গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিস্তৃত একটি সাধারণ এয়ারশেড শেয়ার করে। প্রতিটি এয়ারশেডের কণা বিভিন্ন উৎস এবং অবস্থান থেকে আসে।
উদাহরণ উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয় ঢাকা, কাঠমান্ডু এবং কলম্বোর মতো অনেক শহরে শুধুমাত্র এক-তৃতীয়াংশ বায়ুদূষণ শহরের মধ্যে উৎপন্ন হয়। বায়ুদূষণের আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতিকে স্বীকৃতি দিয়ে, চারটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান প্রথমবারের মতো ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি এবং হিমালয়ের পাদদেশে বায়ুর গুণমান উন্নত করার জন্য কাঠমান্ডু রোডম্যাপ তৈরি করতে একমত হয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার হাতেগোনা কয়েকটি দেশ বায়ু দূষণ রোধে নীতিমালা গ্রহণ করেছে। দেশের অভ্যন্তরে ছাড়াও প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বায়ুদূষণ রোধে কাজ করতে হবে। পাওয়ারপ্ল্যান্ট, বড় ফ্যাক্টরি এবং যানবাহনের মাধ্যমে হওয়া বায়ু দূষণ রোধে নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করলেও দূষণ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে হলে ছোট ছোট ফ্যাক্টরি, কৃষি, রান্নার ধোঁয়া এবং বর্জ্যের মাধ্যমে হওয়া দূষণও রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নিলে প্রতিবছর ৭৫ লাখ জীবন বাঁচানো সম্ভব।’
রিপোর্টে তিনটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো—
১. বড় শহরগুলোতে বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ, মানুষের কাছে তথ্য দেওয়া এবং এয়ারশেড বিশ্লেষণ করতে ইনস্টিটিউট স্থাপনে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া।
২. বড় বড় পাওয়ারপ্ল্যান্ট, ফ্যাক্টরি ও যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃষি, বর্জ্য, চুলা, ইটভাটা ইত্যাদির মাধ্যমে হওয়া দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে এয়ারশেডের পরিধি সম্পর্কিত মানদণ্ড নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
৩. বায়ু দূষণ রোধে যথাযথ বিনিয়োগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, ‘বায়ু দূষণের ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। সঠিক পদক্ষেপ ও নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বায়ুদূষণ রোধে বাংলাদেশ কিছু নীতিমালা গ্রহণ করেছে। জাতীয় পর্যায়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব। এটি রোধে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সবধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’
বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়া রিজিওনাল ইনটেগ্রেশন অ্যান্ড এনগেজমেন্ট’র পরিচালক সিসিলি ফ্রুম্যান জানান, ‘দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো একই এয়ারশেড-সাধারণ ভৌগোলিক এলাকা যেগুলো একই বায়ুর গুণমান বিরাজ করে, তারা যদি সমন্বিত পন্থা অবলম্বন করে তবেই বায়ুদূষণের উদ্বেগজনক মাত্রা কমাতে পারে। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই দেশগুলো আরও দ্রুত ভালো ফলাফল পেতে পারে। বাংলাদেশ এবং আরও কয়েকটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বায়ুর মান উন্নত করতে নীতি গ্রহণ করেছে।’ তবে, জেলা ও দেশ পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি, প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত আন্তঃসীমান্ত পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে আমাদের নীতিমালা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো আইন নেই। আইন প্রণয়নে কাজ চলছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যেদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হক প্রমুখ।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম