Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা প্রকল্প: পরামর্শক ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৪ গুণ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৩

ঢাকা: কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যান্ডামিক প্রিপার্ডনেস শীর্ষক প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় বাড়ছে প্রায় চারগুণ। এ জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পে ৯ জন পরামর্শকের বিপরীতে ৪ কোটি টাকা সংস্থান ছিল। সংশোধন প্রস্তাবে ৯ জনের বিপরীতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এ ব্যয়কে অযৌক্তিক বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পারামর্শকসহ নানা খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে।

বিজ্ঞাপন

উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদেশি ঋণ বা অনুদান নিয়ে তাদের শর্ত অনুযায়ী কিছু পরামর্শক নিতেই হয়। কিন্তু তাই বলে আমাদের ক্ষতি হবে এমন শর্ত মেনে নেওয়া যায় না। আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই এই খাতে ব্যয় যৌক্তিক করবে পরিকল্পনা কমিশন।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি প্রাদুর্ভাবের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশ্ব ব্যাংক ১০ কোটি মার্কিন ডলার জরুরি ঋণ ঘোষণা করে। এ জন্য মূল প্রকল্পটি এক হাজার ১২৭ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার টাকা প্রাক্কালিত ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২৭৭ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার টাকা এবং প্রকল্প ঋণ সহায়তা থেকে ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকল্পটির অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যু ক্রমশ বাড়তে থাকায় এবং দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১০ কোটি মার্কিন ডলার কো-লেন্ডিং করতে সম্মত হয়। বিশ্ব ব্যাংক ভ্যাকসিন কেনা বাবদ ৫০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনের প্রয়োজন হয়। প্রথম সংশোধন প্রস্তাবে মেয়াদকাল অপরিবর্তিত রেখে ছয় হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা ধরা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রকল্পের অধিকাংশ কার্যক্রম উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়। এ জন্য কাস্টমস ডিউটি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে প্রথম সংশোধন প্রস্তাবে অর্থ রাখা হয়নি। কাজেই কাস্টমস ডিউটিসহ নতুন কিছু কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তি ও চলমান কার্যক্রম সংশোধনের জন্য দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত হাজার ৯৬ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদকাল ধরা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে শুধুমাত্র সরকারি খাতে ৩১০ কোটি টাকাসহ দুই বছর সাত মাস মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি কোন কোন অঙ্গে এ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময় বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণগুলো জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়। এ ছাড়া, প্রকল্পের গত বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা (৫৯ দশমিক ১৮ শতাংশ)। এর মধ্যে সরকারি ৫১ কোটি ৬০ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ও বৈদেশিক ঋণ থেকে তিন হাজার ৯৬৪ কোটি ৭৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি কম হওয়ায় যৌক্তিক কারণগুলো জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।

জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংক ৬০ কোটি মার্কিন ডলার এবং এআইআইবি ১০ কোটি ডলার কো-লেন্ডিং হিসেবে ঋণ দিচ্ছে। ঋণের ধরণ, গ্রেস পিরিয়ড (রেয়াতকাল) নিয়েও আলোচনা করা হবে সভায়। প্রকল্প অফিসের জন্য ১৪ জন জনবলের বেতন বাবদ দুই কোটি ২০ লাখ এবং ইমারজেন্সি পাওয়ার হিসেবে এক হাজার ১৫৪ জনবলের আউটসোর্সিং বাবদ ৩৯৩ কোটি টাকার প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু এ বিষয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনবল কমিটির কোনো সুপারিশ আরডিপিপিতে (সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব) পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে জনবল কমিটির সুপারিশ আরডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। গত বছরের জুন পর্যন্ত আউটসোর্সিং বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। জনবল কমিটির সুপারিশ ছাড়া এ ব্যয় কিভাবে করা হলো তা জানা প্রয়োজন।

মূল প্রকল্পের ফার্নিচার বাবদ ছয় কোটি ৭১ লাখ ২৪ হাজার টাকা ধরা ছিল। বর্তমানে প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১৪ লাখ তিন হাজার টাকা। ফার্নিচার বাবদ সরকারি খাতে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া, প্রকল্পে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ বাবদ ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। সংশোধন প্রস্তাবে ১২ কোটি ৪৯ রাখ ৫৬ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা, যার পুরোটাই সরকারি। এ বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।

ভ্রমণ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে মাত্র চার লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট সময়ের জন্য সরকারি খাতে প্রস্তাবিত ১০ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হতে পারে। এই প্রকল্পের আওতায় সাতটি জেলায় মেডিকেল গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনসহ ফিলিং স্টেশন স্থাপন করার প্রস্তাব রয়েছে। সাত জেলার মধ্যে শুধুমাত্র ফিলিং স্টেশন করা হবে গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও রংপুরে। যেখানে প্রত্যেক ফিলিং স্টেশন এক একর করে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। কিন্তু তিনটি জেলায় যথাক্রমে রাজশাহী, মানিকগঞ্জ ও কুমিল্লা যেখানে গ্যাস প্ল্যান্টসহ ফিলিং স্টেশনের জন্য চার একর জমির প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি অনাবাসিক ভবন বাবদ মূল ডিপিপিতে ৩৯৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার সংস্থান আছে। গত বছরের জুন পর্যন্ত অগ্রগতি ১৩১ কোটি ৫২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সংশোধন প্রস্তাবে ৫৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ধীর গতি হলেও এত ব্যয় বাড়ার কারণ জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।

সারাবাংলা/জেজে/ইআ/আইই

করোনা প্রকল্প পরামর্শক ব্যয়

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর