‘দেশে বা প্রবাসে থাকেন ভূমি সম্পদের অধিকার আপনারই থাকবে’
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৯
ঢাকা: ভূমি সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে অনেক মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন আমরা ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলছি। আর এই কষ্টটা মানুষকে পেতে হবে না। দেশে থাকেন, প্রবাসে থাকেন—আপনার সম্পদ আপনরাই থাকবে। আপনাদের অধিকার যাতে সুরক্ষিত ও সুনিশ্চিত হয়, সে ব্যবস্থাটাই গ্রহণ করেছি। আমরা চাই, এই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের অনিয়ম দূর হোক।
বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় ভূমি সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৯ থেকে ৩১ মার্চ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করে তা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করতেই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কর্মকর্তা কর্মচারী আরও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, সেটাই আশা করি। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকেই আওয়ামী লীগের জন্ম।
মানুষের অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে যে সমস্যাগুলো বিভিন্ন পারিবারিক বা নানাভাবে মানুষকে কষ্ট দিত, সেগুলো দূর করারও পদক্ষেপও সরকার নিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসে জীবন্ত মানুষ অগ্নিদগ্ধ করাসহ পুড়িয়ে মারার ঘটনাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নাকি আন্দোলন? বিএনপি জামায়াত জোট মিলে সেটা করেছিল। ৭০টি সরকারি অফিস তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল। ভূমি অফিস পোড়ানোর কী লক্ষ্য থাকতে পারে জানি না? তবে তখন একটা নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম, যারা এই ভূমি অফিস পুড়িয়েছে, তারা যে জমিতে বাস করে সেখান থেকে তাদের বের করে দিতে হবে। কারণ ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের কাছে আর কোনো ডকুমেন্ট থাকবে না। কাজেই জমির মালিক তারা নন। ওগুলো আমরা একেবারে গৃহহীনদের মাঝে বণ্টন করে দেব।
এ কথা বলার পর ভূমি অফিস পোড়ানোটা বন্ধ হয়েছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ভূমি অফিস পোড়ানোর ফলে আমাদের একটা ভালো কাজ করে দিয়েছে। ভূমি অফিসের যে দুর্দশা ছিল সেটা সকলের নজরে এসেছে। এখন আমরা প্রায় চারশোটা নতুন ভূমি অফিস করে দিয়েছি। আমাদের প্রত্যেক উপজেলায় এখন উন্নতমানের ভূমি অফিস এবং রেকর্ড সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কাজেই ধ্বংসাত্মক কাজের মধ্য দিয়ে একটা শুভ কাজের উদ্বোধন করেছি।
ভূমি মন্ত্রণালয় সাতটি উদ্যোগের উদ্বোধন করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাতটি উদ্যোগের প্রত্যেকটাই উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের কাজের মধ্য দিয়ে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আজকে আমরা সাতটি উদ্যোগের শুভ উদ্বোধনে ঘোষণা করেছি। আমি আশা করি এটা যথাযথভাবে কার্যকর হয়ে মানুষের সেবা আরও উন্নত হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় ভূমি সম্মেলনের অন্যান্য লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে নাগরিক, সরকারি সংস্থা, অংশীজনদের অবহিত করানো, তাদের মধ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ভূমিসংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।
মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স। বাকি ছয়টি উদ্যোগ হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ, স্মার্ট ভূমি নকশা, স্মার্ট ভূমি রেকর্ডস, স্মার্ট ভূমি পিডিয়া, স্মার্ট ভূমিসেবা কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভূমিসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এনআর/আইই