‘মানুষের যত বেশি অর্থ-সম্পদ হচ্ছে ততই লোভ-লালসা বাড়ছে’
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:৩১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের যত বেশি অর্থ-সম্পদ হচ্ছে ততই চাহিদা বাড়ছে এবং তত বেশি লোভ-লালসাও বাড়ছে। পারিবারিক সংঘাত, খুন-খারাবি ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে। যদি ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা যায় তাহলে পারিবারিক সমস্যাগুলো থাকবে না। মানুষ অন্তত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে।
বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ভূমি সম্মেলন-২০২৩ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় ভূমি সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৯ থেকে ৩১ মার্চ এ সম্মেলন হবে। সম্মেলনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করে তা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করতেই এই সম্মেলন।
ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত জটিলতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথায় বলে যে, জোর যার মুল্লুক তার। অনেক সময় ভাই বোনকে বঞ্চিত করে, আবার বোন যদি শক্তিশালী হয় ভাইকেও বঞ্চিত করে। আবার বোনও বোনকে বঞ্চিত করে। এরকমও ঘটনা আছে। প্রায় এই সমস্যাটা আসে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘বণ্টন ব্যবস্থা যদি যথাযথভাবে হয়, যার যার অধিকার সে সমানভাবে পাবে। তারপর কেউ যদি মনে করে সেটা সে দান করে দেবে বোনকে বা ভাইকে, তবে সেটা দান করে দেবে। তবে এক্ষেত্রে বোনরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়। এটাও বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘বণ্টন ব্যবস্থাটাকে ডিজিটালাইজড করে এটা সুনির্দিষ্টভাবে করতে পারলে অনেক পারিবারিক সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। কারণ, আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের যত বেশি অর্থসম্পদ হচ্ছে, ততই বেশি চাহিদা বাড়ছে এবং তত বেশি লোভ-লালসাও বাড়ছে। পারিবারিক সংঘাত, খুন-খারাবি, দ্বন্দ্ব- এগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। একবার যদি ডিজিটালাইজ করা যায় তাহলে অন্তত পারিবারিক এই সমস্যাগুলো থাকবে না। মানুষ অন্তত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে।’
প্রবাসীরা ভূমি সেবা পোর্টাল ই-খতিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করলে ডাক বিভাগ তাদের ঠিকানায় জমির খতিয়ান পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের ৭ নভেম্বর ই-সেবা উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত ৭৭ লাখের বেশি নাগরিক এই সেবাটি গ্রহণ করেছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান ও ম্যাপ পৌঁছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখের অধিক খতিয়ান ও ম্যাপ নাগরিকরা হাতে পেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। ফলে ভূমির মালিকরা ঘরে বসেই নামজারি আবেদন করতে পারছেন এবং হয়রানি ছাড়াই সেবা নিতে হবে। প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখের বেশি নামজারি নিষ্পত্তি হচ্ছে।’
নগদ টাকা ছাড়া সেবার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২২ সালে ১ অক্টোবর থেকে ই-নামজারি সিস্টেমকে পুরোপুরি ক্যাশলেস ঘোষণা করা হয়েছে। সব ভূমি অফিসে ম্যানুয়াল ডিসিআরের পরিবর্তে চালু করা হয়েছে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য কিউআর কোড সমৃদ্ধ ডিসিআর।’
ডিজিটাল পদ্ধতি আরও আধুনিক করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সিস্টেমের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করে শিগগির দ্বিতীয় প্রজন্মের ই-নামজারি চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ই-মিউটেশনের বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘে ইউনাইটেড ন্যাশন্স পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অর্জন করেছে।’ এ জন্য তিনি মন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সম্মানের সঙ্গে চলছে। তবে আমি জানি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং করোনা ভাইরাসের অতিমারির কারণে যে মূল্যস্ফীতি সারাবিশ্বব্যপী তার ধাক্কা থেকে আমরাও রেহাই পায়নি। এজন্য আমি আহ্বান জানিয়েছি কারও এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নিজের উৎপাদন নিজে করেন। আমাদের যেন কখনো অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়। কারণ অনেক উন্নত দেশ আজকে মুদ্রাস্ফীতির চাপে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ অন্তত সরকারের প্রচেষ্টায় অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের অনেক জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমরা আমদানিনির্ভর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যের চাহিদা যেন পূরণ করতে পারি সেই লক্ষ্যে সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতটি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স। বাকি ছয়টি উদ্যোগ হচ্ছে- রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন আন্তঃসংযোগ, স্মার্ট ভূমি নকশা, স্মার্ট ভূমি রেকর্ডস, স্মার্ট ভূমি পিডিয়া, স্মার্ট ভূমিসেবা কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
এ সময় দেশবাসীকে রমজানুল মোবারকবাদ জানিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অুনষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন ও ভূমিসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম