দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৯:৫৩
ঢাকা: করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরেও বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন বা ২৬ লাখ ৩০ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ বেকার ১ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন বা ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারী বেকার শূন্য দশমিক ৯৪ মিলিয়ন বা ৯ লাখ ৪০ হাজার জন। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। গত ২০১৬-১৭ সালে করা সর্বশেষ জরিপে বেকার সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ।
বুধবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মো. এহছানে এলাহী এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড.শাহনাজ আরেফিন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন শ্রম শক্তি জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজার তথ্যেও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আজিজা রহমান। বক্তব্য দেন- বিবিএসের ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইংয়ের পরিচালক কবীর উদ্দিন আহমেদ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. দীপংকর রায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে একটা রুপান্তর ঘটছে। সেটি গ্রামে গেলে বোঝা যায়। রাষ্ট্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা এখন মূল কাজ। অর্থাৎ শ্রমিকদের ন্যায্যতা ও মূল্য পাওয়া নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। নারীদের পারিবারিক কাজ শ্রম শক্তির বাইরে আছে, এটা দুঃখজনক। তাদেরটা যোগ করা হলে জিডিপি ৪৫০ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৬৫০ বিরিয়ন হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সময় এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে দারিদ্র্য কমেছে এবং বেকার সংখ্যা কমেছে। এর মূল কারণ, আমরা সীমিত লকডাউন করেছি। শিল্প-কারখানা খোলা ছিল। রাস্তাঘাট খোলা ছিল। প্রধানমন্ত্রী দ্রুত প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। ফলে করোনার সময় ঢাকায় উল্টোচিত্র বিরাজ করেছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘করোনাকালীন শহর থেকে অনেক মানুষ গ্রামে গেছেন। সেখানে তারা কৃষিতে যুক্ত হয়েছেন। প্রচলিত শস্যের বাইরে শস্য বহুমুখীকরণে ভূমিকা রেখেছেন। তারা ফুল, ফল, মাছসহ নানা বৈচিত্রময় চাষে যুক্ত হন। পাশাপাশি যেসব জমি পড়ে ছিল সেগুলো চাষের আওতায় চলে আসে। ফলে কৃষিতে শ্রম শক্তি বেড়েছে। কিন্তু এটা পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে।’
শ্রমশক্তি জরিপ-২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে গড় বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ বেকারত্বেও হার ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং নারী বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ এর তুলনায় ২০২২ এর জরিপে দেখা যায়, বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ থেকে কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। পাশাপাশি নারীদের বেকারত্বের হার কমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর হার হার ৬১ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ দশমিক ৭১ এবং নারী ৪২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত ১২ বছর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারীর হার ২০১০ সালে ৫৯ দশমিক ৩ হতে ২০২২ এ বৃদ্ধি পেয়ে ৬১ শতাংশ হয়েছে।
মোট শ্রমশক্তি: দেশে মোট শ্রমশক্তি ৭৩ দশমিক ৪১ মিলিয়ন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৭ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ও নারী ২৫ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন। গত পাঁচ বছরে ২০১৬-১৭ হতে ২০২২ পর্যন্ত ৯ দশমিক ৯১ মিলিয়ন শ্রমশক্তি বেড়েছে।
কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী: জরিপ অনুযায়ী, মোট কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ৭০ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন এবং নারী ২৪ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন। গত এক দশকে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। ২০২২ সালে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে।
শ্রমশক্তির বাইরে মোট জনগোষ্ঠী: ১৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী শ্রমশক্তির বাইরে থাকা মোট জনগোষ্ঠী হলো ৪৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ দশমিক শূন্য ৯ মিলিয়ন এবং নারী ৩৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন। গত ২০১৬-১৭ এর তুলনায় ২০২২ এর জরিপে দেখা যায়, শ্রমশক্তি বাইরে অবস্থান করছে এমন জনসংখ্যা ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন বেড়েছে।
সেক্টরভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী: জরিপে দেখা যায়, মোট ৭০ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন কর্মক্ষম ব্যক্তির মধ্যে কৃষি সেক্টরে ৩২ দশমিক ২ মিলিয়ন, শিল্প সেক্টরে ১২ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন এবং সেবা সেক্টরে ২৬ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী নিয়োজিত রয়েছে। কৃষি ও সেবা সেক্টরে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বেড়েছে।
শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার: জরিপ অনুযায়ী শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামঞ্চলে ৫০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২০১৬-১৭ এর তুলনায় ২০২২ এর জরিপে দেখা যায়, শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৩৬ দশমিক ৩ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ দশমিক ৬৮ হয়েছে।
কর্মে নিয়োজিত যুব (১৫-২৯ বছর বয়সী) জনগোষ্ঠী: শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, মোট কর্মে নিয়োজিত যুব (১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী) জনগোষ্ঠী ২৬ দশমিক ৮২ মিলিয়ন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ও নারী ১৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন। গত ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় ২০২২ এর জরিপে দেখা যায়, কর্মে নিয়োজিত যুব জনগোষ্ঠী ২০ দশমিক ১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২৬ দশমিক ৮২ মিলিয়ন হয়েছে। পাশাপাশি যুব নারী জনগোষ্ঠীর কমে নিয়োজিত সংখ্যা বেড়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম