৫১ সরকারি হাসপাতালে (তালিকাসহ) বৈকালীন চেম্বার শুরু ৩০ মার্চ
২৯ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৫
ঢাকা: বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দেশের ৫১টি সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বা বৈকালীন চেম্বার শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরকারি চিকিৎসকরা রোগী দেখবেন। বেলা ৩টায় একযোগে এই হাসপাতালগুলোর সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলা ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালে চালু করা হবে। বুধবার (২৯ মার্চ) রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকা বিভাগের ১০ জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের আট জেলা, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা, খুলনা বিভাগের চার জেলা, রাজশাহী বিভাগের তিন জেলা, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা, বরিশাল বিভাগের তিন জেলা এবং সিলেট বিভাগের চার জেলায় ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
যেসব সরকারি হাসপাতালে চালু হচ্ছে চিকিৎসকদের বৈকালীন সেবা
প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা বিভাগের ১০ জেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। হাসপাতালগুলো হলো- মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল, রাজবাড়ি জেলা সদর হাসপাতাল, ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিভাগের আট জেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সেগুলো হলো- ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল এবং পেকুয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল, নোয়াখালী সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে- জামালপুর জেলা সদর হাসপাতাল এবং সরিষাবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শেরপুরের নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
এছাড়া খুলনা বিভাগের চার জেলার হাসপাতালগুলো হলো- ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতাল, যশোরের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রাজশাহী বিভাগের তিন জেলার হাসপাতালগুলো হলো- নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল ও সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার হাসপাতালগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও জেলা সদর হাসপাতাল, কুড়িগ্রাম জেলা সদর হাসপাতাল, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুরের বদরগঞ্জ ও গংগাচরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নীলফামারীর ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
বরিশাল বিভাগের তিন জেলার হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে- ভোলা জেলা সদর হাসপাতাল ও চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরগুনার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরিশালের আগৈলঝড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
সিলেট বিভাগের চার জেলায় এই সেবা চালু হচ্ছে। সেখানকার হাসপাতালগুলো হলো- সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল ও ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিলেটের গোপালগঞ্জ ও বিশ্বনাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
নির্দেশনা পৌঁছানো হয়েছে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে
৩০ মার্চ থেকে বৈকালীন চেম্বার শুরুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এতে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে পাইলটিং আকারে জেলা পর্যায়ে ১০টি এবং উপজেলা পর্যায়ে ২০টি হাসপাতালে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালুর জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপির নির্দেশনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস চালুর জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই করা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা অনুযায়ী বিভাগওয়ারী জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম ও মোবাইল নাম্বার (ছক সংযুক্ত) কার্যার্থে পাঠানো হলো।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। নীতিমালা প্রণীত হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এই চিঠি পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন ফেনী জেলা সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, আমাদের কাছে নির্দেশনা পৌঁছানো হয়েছে। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
এদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৈকালীন চেম্বারে রোগীদের সেবা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “ইনশাআল্লাহ আগামীকাল বেলা ৩টা থেকে দেশের প্রায় ৫০টি সরকারি হাসপাতালে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্যমান সরকারি স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ‘বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত’ সরকারি চিকিৎসকরা রোগী দেখবেন ও বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করবেন।”
পর্যায়ক্রমে খুব দ্রুতই দেশের সকল জেলা ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালেই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে উল্লেখ করা হয়। পোস্টে আরও বলা হয়, ‘যেখানে বিকেলে বা সন্ধ্যায় চিকিৎসা নিতে মানুষকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল/ক্লিনিকে সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকতে হতো, এখন প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট করা হাসপাতালগুলোতে দুপুরের পরও নামমাত্র ফি দিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের রোগী দেখাতে পারবেন, চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।’
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই পোস্টে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২২ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের সাথে বিভিন্ন চিকিৎসক পেশাজীবী সংগঠনসহ, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিসবিষয়ক একটি জরুরি সভায়’ নির্ধারিত কর্মঘণ্টা শেষে ১ মার্চ থেকে নিজ কর্মস্থলেই সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ঘোষণা দেন। যদিও ঘোষিত দিনে তা শুরু করা যায়নি।
সোমবার (২৭ মার্চ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে বৈকালিক চেম্বার বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিবসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিএমএ, স্বাচিপের নেতাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরাও।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাধিক ব্যক্তি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া বৈকালিক চেম্বারে সেবা শুরু দেওয়া বিষয়ে আপত্তি জানায়। একইসঙ্গে সময়সূচি নিয়েও কয়েকটি প্রস্তাব আসে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেবা বাড়ানো যায় কি না তা নিয়েও আলোচনা করা হয়। সেইসঙ্গে সরকারি হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে সেবা নেওয়াটা কতটুকু সঠিক হবে এমন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় সমালোচনা হলেও সফল হয়েছেন তিনি। আর তাই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের বৈকালিক চেম্বারের সিদ্ধান্তেও তিনি আশাবাদী।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে ৩০ মার্চ সেবা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানান। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত ফি ও আনুষাঙ্গিক কিছু বিষয় জানালেও কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এ সেবা দেওয়া হবে তা নিয়ে কিছু জানাননি। কারণ কোনো কিছুই আসলে চূড়ান্ত করা হয়নি যা তিনি জানাতে পারবেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং শেষ হওয়ার পরে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন হাসপাতালের নাম চূড়ান্ত করার জন্য। এরপরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বৈঠক করলেও মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল পর্যন্ত কোনো নাম চূড়ান্ত হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নীতিমালা বিবেচনায় নিয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করা হতে পারে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো বিবেচনা করে জানানো হবে কী কী সেবা কোনভাবে দেওয়া হবে। এর বাইরে স্বাস্থ্য অধিদফতর নাম চূড়ান্ত করলে তখন বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।’
তবে ৩০ মার্চ শুরুর ঘোষণা দিলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই অবগত না হওয়ার কারণে এই প্রকল্প নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন একাধিক অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরাও।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম