মাছ-সবজিতে আগুন, ব্রয়লার মুরগি একেক বাজারে একেক দাম
৩১ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবুও দাম বাড়ছে। কাঁচা বাজারে দামের চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। অবস্থা এমন যে, মাছ-মাংস ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না মধ্য ও নিম্নবিত্তরা। এসবের বাইরে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। সপ্তাহজুড়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজারে বাজারে হন্যে হয়ে ঘুরেও মুরগির দামের যেমন লাগাম টানতে পারেননি, তেমনি মাছ-সবজির দামে যে আগুন, সেটাও নেভাতে পারেননি।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একেক কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম একেকরকম। এক কিলোমিটারের মধ্যে তিন কাঁচাবাজারে দাম তিনরকম, হেরফের ১০ থেকে ৩০ টাকা।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকালে নগরীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের উত্তাপে গরীব, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি অবস্থা। নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে পণ্যের দামের হেরফের নিয়ে বিক্রেতাদের সুনির্দিষ্ট কোনো যুক্তি নেই। এ যেন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা আর তাপে দগ্ধ হওয়া !
শহরের একপ্রান্তে ইপিজেড কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৯৫ টাকায়। আর শহরের মূলকেন্দ্র যদি নিউমার্কেটকে ধরা হয়, তাহলে এর দুইপাশের দুই কাঁচাবাজারে মুরগির দামের ব্যবধান অন্তঃত ৩০ টাকা। নিউমার্কেটের দক্ষিণে ফিরিঙ্গিবাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২২৫ টাকায়। আর নিউমার্কেটের উত্তরে রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়।
তবে এক কিলোমিটারের ব্যবধানে তিন কাঁচাবাজারে মুরগির দামের হেরফের দেখে তাজ্জব হতে হয়েছে ক্রেতাদের। কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে ২০০ টাকা, আসকারদিঘীর পাড় কাঁচাবাজারে ২১০ টাকা এবং ব্যাটারীগলি কাঁচাবাজারে ২১৫ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে।
ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বাসিন্দা সানিয়া এলিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারে যে মুরগি ১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেটা ফিরিঙ্গিবাজারে ২২৫ টাকা। একেক বাজারের বিক্রেতারা কি একেক দামে মুরগি কেনে ? এটা যে স্পষ্টতঃ সিন্ডিকেটবাজি সেটা কী প্রশাসন বুঝতে পারছে না ? বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন যা করছে সেগুলো আসলে ফাঁকা বুলি, মানুষের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা। এরকম হলে আমরা গরীব-মধ্যবিত্তরা যাবো কোথায় ?’
ব্যাটারিগলি বাজারের নিয়মিত ক্রেতা বাগমনিরাম এলাকার বাসিন্দা ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, ‘একলাফে মুরগির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা বাড়িয়ে ১০-২০ টাকা কমানোর কোনো মানে হয়না। দেশটা এখন জোর যার মুল্লুক তার নীতিতে চলছে। এখানে সাধারণ জনগণের কথা কেউ চিন্তা করেনা, শ্রমিকের কথা কেউ চিন্তা করে না। গরীবের পেটে লাথি মেরে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। আর তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। না হলে এই যে সিন্ডিকেট সেটা থামাতে পারে না কেন ?’
আসকারদিঘীর পাড় বাজারের ক্রেতা পুতুল দাশগুপ্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারের ভেতর দোকানে ২১০ টাকায় ফার্মের মুরগি বিক্রি হচ্ছে। বাইরের দোকানে আরও পাঁচ টাকা বেশি। মানুষের ওপর জুলুম চলছে।’
কাজির দেউড়ি বাজারের মুরগি বিক্রেতা শফিউল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘খামারিরা বেশি দামে মুরগি বিক্রি করছে। তারা বলছে, মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহে আমরা ফার্মের মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন দাম কিছুটা কমেছে। আজ (শুক্রবার) ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে আরও কমতে পারে।’
সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে হাড়ছাড়া গরুর মাংসের ৯০০ ও হাড়সহ গরুর মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খাসির মাংস আগের ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরু-খাসির দাম মোটামুটি সব কাঁচাবাজারে একই দেখা গেছে।
সবজির মধ্যে গাজর, বেগুন, শসা ও লেবুর দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ছোলা কেজিতে ১০ টাকা ও ডিম ডজনপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে।
নগরীর ইপিজেড ও কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি বরবটি ৮০, শিম ৬০, পটল ৮০, মুলা ৫০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, ফুলকপি ৫০, ঢেঁড়শ ও তিত করলা ৯০, লতি ৬০, চিচিঙ্গা ৬০, ঝিঙ্গা ৮০ এবং কাঁচাকলা হালি প্রতি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাঝারি ও ছোট মানের লেবু হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বড় লেবু হালিতে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি গাঁজর ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গতসপ্তাহে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসার দাম ঠেকেছে ৬০ টাকায়।
মাছের বাজারও সাধারণ ভোক্তাদের চিন্তায় ফেলেছে। কাজির দেউড়ি বাজারে রুই ও কাতলা মাছ ৩০০, পাঙ্গাশ ১৮০, তেলাপিয়া ২২০, কই মাছ ৩০০, গলদা চিংড়ি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শোল মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পোয়া মাছ ৩৬০ ,কালো চাঁন্দা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়।
মাছ ব্যবসায়ী বিক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে কয়েকটি মাছের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। রমজানের শেষের দিকে মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে।’
নগরীর ইপিজেড কাঁচাবাজারে আসা নাছির হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেড়েছে। একটা আইটেম দেখাতে পারবেন না যেটার দাম সহনীয় আছে। কি কিনবো কিছুই বুঝতে পারছি না ! সংসারের খরচ মেটানোই দায় হয়ে গেছে !’
সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন কাঁচাবাজারে অভিযান চালিয়ে আসা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা প্রতিদিন বাড়ে, আবার কমেও। সরকার থেকে এসব পণ্যের দাম নির্দিষ্ট করে দেয়া যায় না। একেক জায়গায় একেক দাম, সেটা পাঁচ থেকে দশ টাকা এদিক-ওদিক হতে পারে। তবে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি নিলে সেটা অপরাধ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
সারাবাংলা/আইসি/এনইউ