‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, প্রথম আলোও আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে’
১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১৮
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। আজ আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সাংবাদিকরা আমাদের শত্রু নয় কিন্তু প্রথম আলো আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। বিএনপিকে আমরা ভাবি প্রতিপক্ষ, বিএনপি আমাদের ভাবে শত্রু। প্রথম আলোও আমাদের শত্রু ভাবে।’
শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়টি যে আমাদের রাজনৈতিক জীবনের সংকট ঘনীভূত করছে এতে সন্দেহ নেই। ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কী করব’- শিরোনামের সংবাদ এই ষড়যন্ত্রটির একটি অংশ। এই সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক, দুরভিসন্ধিমূলক; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা সাংবাদিকতার বিশ্বজনীন নীতিমালার চরম অপমান।’
‘প্রথম আলো এক দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এটি সাধারণ কোন দিনমজুরের বক্তব্য নাকি প্রথম আলোর দেওয়া বয়ান সেটা ভাববার সময় এসেছে? ৭ বছরের একটা শিশুকে দশটা ঘুষ দিয়ে অসৎ পথে পরিচালিত করা কি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা’, প্রশ্ন তোলেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেকে বলেছেন, এটি তাদের ভুল। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই স্বাধীনতা দিবসের দিনে বাঙালি জাতির ৫২ বছরের অর্জন মর্যাদা নিয়ে তামাশা করা সাধারণ কোনো ভুল নয়। এটি শুধু একটি অনৈতিক কাজ নয় বরং ফৌজদারি অপরাধ। দেশে নৈরাজ্য অশান্তি সৃষ্টি করে একটি মহলের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুর্নিদিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তা দেশের বিবেকবান মানুষের না বোঝার কারণ নেই।’
প্রথম আলোর সম্পাদক-প্রকাশক কী দায় এড়াতে পারেন? তারা কি তাদের এই গৃহীত অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন অথবা ক্ষমা চেয়েছেন? কোনটাই করেন নাই, বলেও জানান তিনি।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বিবৃতি নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান বলছে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যই সরকার এ ধরনের মামলা করেছে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে। আমি প্রথমে বলতে চাই সরকার কিন্তু এখানে মামলা করেনি। মামলা সাধারণ একজন নাগরিকও করতে পারে। সরকার মামলা করেছে এটা সর্বাগ্রে মিথ্যা। আর ভয় দেখানোর কথা যে বলা হচ্ছে কাকে ভয় দেখাবো? যাকে ভয় দেখানোর কথা বলা হয়েছে তিনি এই দেশের মানুষকে ভয়ের মধ্যেই রাখতে চেয়েছিলেন। তিনি এদেশে রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভয় দেখিয়েছিলেন। তিনি এদেশের রাজনীতিকে ভয় দেখিয়েছিলেন। তিনি এই দেশের সংবিধানিক সরকারকে ভয় দেখিয়েছিলেন। অসংবিধানিক সরকারের পক্ষে ওকালতি করেছেন। ওয়ান-ইলেভেন আমাদের মনে নেই? কে কাকে ভয় দেখায়। তিনিই তো বিরাজনীতির ফয়সালা নিয়ে পত্রিকার রিপোর্ট করেছেন? সম্পাদকীয় লিখেছেন? আমরা কি ভুলে গেছি?’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম আলো আর বিএনপি; একজন আরেকজনের সাপ্লিমেন্ট করে। টার্গেট হচ্ছে সরকার। টার্গেট হচ্ছে শেখ হাসিনা। টার্গেট গণতন্ত্র। টার্গেট আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল করা।’ এই সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য হেন কোন তৎপরতা নেই যা বিএনপি নামক এবং প্রথম আলো নামক পত্রিকাটি না করছে বলে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক লিংক এদের অনেক শক্ত। তাই এ খবর ছড়িয়ে দিয়েছে যে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির জন্য রিপোর্ট করায় এই পত্রিকার, এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য রিপোর্ট করার জন্য টকশোতে অংশ নেওয়ার জন্য সরকার কি একজন লোকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? তাহলে মিথ্যা সংবাদ আজকের সারা দুনিয়ায় রটানো হচ্ছে যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য রিপোর্ট করাতেই এই সাংবাদিক, এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু প্রথম আলো আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। বিএনপিকে আমরা ভাবি প্রতিপক্ষ, বিএনপি আমাদের ভাবে শত্রু। প্রথম আলো আমাদের শত্রু ভাবে। এখানে প্রত্যেকটা সম্পাদকীয় পলিসি আওয়ামী লীগের সঙ্গে শত্রুতা; যেটা বিএনপির রাজনীতি, সেই একই রাজনীতিকে তারা সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আজকের বাস্তবতা।’
এসময় সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অবদানের প্রসঙ্গ তুলেও ধরেন ওবায়দুল কাদের।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ নেই, আমরা সাংবাদিকদের বন্ধু উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা গঠনমূলক সমালোচনায় বিশ্বাসী। আমাদের কোনো সমালোচনা করা যাবে না, এটা আমরা কখনো বলি না। আমাদের গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা স্বাগতম জানাই। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন ভণ্ডুল করার জন্য অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের জন্য আজ দেশের একটি মহল আন্তর্জতিক ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তিসহ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের ইন্ধনে আমাদের দেশের গণমাধ্যমে মহান স্বাধীনতা জাতীয় দিবসের দিনে এ ধরনের পলিটিক্যালি সিলেকটিভ এবং অত্যন্ত স্পর্শকাতর সংবেদনশীল বিষয়ে আপত্তিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে।’
দেশবাসীকে এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক আব্দুস সোবহান গোলাপ, উপ দফতর সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও