‘জাটকা নিধন বন্ধ হলে মানুষ বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে’
১ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৪৩
ঢাকা: জাটকা নিধন বন্ধ হলে দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, একটা মা ইলিশ ধরা মানে ছয় লাখ ডিম নষ্ট করা। জাটকা ধরা মানে ছোট ইলিশ বড় হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। যারা জাটকা ধরছে, এ মাছ বড় হলে তারাই ধরবে, বড় মাছ বিক্রি করে তারাই লাভবান হবেন। দেশের মানুষ সুস্বাদু বড় ইলিশ খেতে পারবে।
শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে পিরোজপুরের হুলারহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘একটা মা ইলিশ ছয় লক্ষাধিক ডিম দেয়। কিছু দুর্বৃত্ত বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ইলিশের প্রজননস্থলের পরিবেশ নষ্ট করে। নদী দূষণ করে ইলিশের ডিম ও পোনা নষ্ট করে। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে যত্রতত্র মাছ আহরণ করে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন করে।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময় দেশে মাছের আকাল ছিল। বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দফতর-সংস্থার কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ মাছের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিশ্বের মোট ইলিশের শতকরা ৮০ ভাগ শুধু বাংলাদেশে উৎপাদন হয়।
২০০৮-০৯ সালে দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা এবং তার সরকারের অবদানের কারণে ইলিশের উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় স্মার্ট মৎস্য খাতের দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির অনেক মাছ ফিরিয়ে এনে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছের পোনা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে অঞ্চলে যে মাছ নেই, সে অঞ্চলে সে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে। এভাবে ভাতে-মাছে বাঙালির বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জিআই সনদপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ ইলিশ বিলুপ্ত হলে বাঙালির গর্বের ইলিশের জিআই সনদ থাকবে না। সে জন্য কোনোভাবেই মা ইলিশ ধরা যাবে না, জাটকা ইলিশ নিধন করা যাবে না। জাটকা নিধন বন্ধ থাকাকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ দেওয়া হচ্ছে, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইলিশ বড় হতে দিতে হবে। বড় ইলিশ মৎস্যজীবীরাই আহরণ করবে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, নৌপুলিশের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন এস এম এনামুল হাসান, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, পিরোজপুরের বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘করলে জাটকা সংরক্ষণ, বাড়বে ইলিশের উৎপাদন’-এ প্রতিপাদ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২৩। চলবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদফতর।
সারাবাংলা/জিএস/ইআ