মহিলা দলের কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা
১ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুর্যো: চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের ঘোষিত কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ-আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ একদল নেত্রী।
শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা এসেছে। এতে নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগ করা ১৩ জনসহ অন্তঃত ৩৫ নেত্রী উপস্থিত ছিলেন।
নতুন কমিটির সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জেসমিনা খানম বলেন, ‘আমরা কোনো অপরাজনীতির সাথে জড়িত হতে চাই না। চট্টগ্রামে মহিলা দলের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে সেটাতে আমরা নারাজি প্রকাশ করছি। এ কমিটির ১০ জনকেও আমরা চিনি না। শুভঙ্করের ফাঁকির মতো কমিটি দিয়ে গেলেই যে মেনে নেব, এমনটা হতে পারে না।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি এই কমিটির বিষয়ে কিছুই জানতেন না? আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, কেন ত্যাগীদের তারা মূল্যয়ন করলেন না। চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডে মহিলা দলের কমিটি আছে। তৃণমূল থেকে তেমন কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। কাদের স্বার্থে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে?’
সভাপতির পদ পাওয়া মনোয়ারা বেগম মণির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনি বছরে সাত মাস দেশের বাইরে থাকেন। তিনি আমেরিকার সিটিজেন। সাত মাস যিনি সংগঠনের কোনো কাজ করেন না, তাকে দেওয়া হয়েছে সভাপতির পদ। আর আমরা যারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে দলের জন্য খেটে যাই, তাদের কোনো মূল্যয়ন করা হয়নি। উনার সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো দ্বন্দ নেই। তাকে আমরা ভালোবাসতাম। এখন আর ভালোবাসি না। আমরা নতুন নেতৃত্ব চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাখান করে সাবেক ছাত্রদল নেত্রী আঁখি সুলতানা বলেন, ‘যাদের কখনও আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি, তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমরা মনোয়ারা বেগম মণি বা জেলি আক্তারের বিপক্ষে নয়। কিন্তু আমরা চাই নেতৃত্বের বিকাশ হোক। এখানে আমরা যারা আছি, সবাই জেল, জুলুমের শিকার হয়েছি। অনেকে বলছে আমরা চেয়ারের জন্য আন্দোলন করছি। এটি সঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘যে কমিটি হয়েছে এটা গুপ্ত কমিটি, বাণিজ্যের কমিটি, সিন্ডিকেট কমিটি। এ কমিটি আমরা মানি না। আমরা এই কমিটি প্রত্যাখান করলাম। নতুন কমিটি বাতিল করে কেন্দ্র থেকে পুনরায় কমিটি ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে মনোয়ারা বেগম মণি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কে কোথায় কি করলো এসব বিষয়ে আমার জানা নেই। কমিটিতে কাঙ্খিত পদ না পেয়ে দুই একজন একটু হা-হুতাশ করছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়।’
সাত মাস দেশের বাইরে থাকার অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব ওরা বলবে। এটা ওদের ব্যক্তিগত মতামত।’
সংবাদ সম্মেলেন কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ন সম্পাদক ফাতেমা বাদশা, সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পারভীন চৌধুরী, নগর মহিলা দলের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটা, সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা কাজল, সদস্য নার্গিস বেগম, সাইমা হক, মনোয়ারা বাবুল, খাদিজা বেগম, নাজমা বেগম, মর্জিনা খসরু উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এর ১২ মাস ২০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) কেন্দ্র থেকে ১৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে অবমূল্যায়নের অভিযোগে সেদিনই ১৩ জন একযোগে পদত্যাগ করেন।
জেসমিনা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওইদিন আমরা ১৩ জন পদত্যাগ করেছি। পরবর্তীতে আরও ২২ জন পদত্যাগ করেছেন। মোট ৩৫ জন এই কমিটিকে প্রত্যাখান করেছেন। আরও অনেকে করবে। কেন্দ্র থেকে যে কমিটি দেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে কেউ কাজ করতে আগ্রহী নয়।’
সারাবাংলা/আইসি/একে