৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা
২ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩৮
ঢাকা: করোনা পরবর্তী বিশ্বজুড়ে মন্দা অর্থনীতি এবং ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের মাঝেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন আশা দেখা দিয়েছে। সদ্য বিদায়ী মার্চে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মার্চে দেশে বৈধপথে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২২ সালের মার্চে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রবাসীরা পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
রোববার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে দেশজুড়ে তীব্র ডলার সংকটের মাঝে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতে সুবাতাস বহন করছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-২২ থেকে মার্চ-২৩) প্রবাসীরা ১৬ দশমিক ০২২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ১০৭ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৭১ হাজার ৫১৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-২১ থেকে মার্চ-২২) ১৫ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে মুদ্রায় এর পরিমাণণ ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এদিকে সদ্য বিদায়ী মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭৩ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে ডলার সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করত।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদের আগ দিয়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। এবারও তাই হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে ব্যাপক মূলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যাপক সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রবাসীদের একটি বড় অংশই হলো আমাদের নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রবাসীরা তাদের পরিবার পরিজনের জন্য নিজেরা খেয়ে না খেয়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যারা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন।’
অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৯ কোটি ২২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। এ ছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার,২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার,২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার,২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স : সদ্যবিদায়ী ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
সারাবাংলা/জিএস/একে