আইনজীবীদের মধ্যে ডিম ছোঁড়াছুড়ি, সুপ্রিম কোর্টে উত্তেজনা
৩ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৫
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ধাক্কাধাক্কি ও ডিম ছোঁড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষের আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি ও পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়া নিয়ে সমিতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে এমন হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিন দুপুর পৌনে দুইটায় সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনের পূর্ব দিকের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শতাধিক আইনজীবীর উপস্থিতিতে সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আয়োজন করা হয়।
এসময় মিলনায়তনের ভেতর থেকে সবগুলো দরজা আটকে দেওয়া হয়। এরপর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা শেষ করে নতুন কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর পর্ব সমাপ্ত করা হয়। পরে দ্রুত সরকার সমর্থক আইনজীবীরা পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বের হয়ে যান। এরপর মিলনায়তনের সবগুলো দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে আইনজীবীদের একাংশদের নিয়ে গঠিত ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটি’ সমিতির মিলনায়তনে প্রবেশ করতে না পেরে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, ‘আজ আমরা বেলা ১১টায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছি। উনাকে আমরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, এই অনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে আপনি কোনো সম্পর্ক রাখবেন না। সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে কোনোভাবেই তাদের আপনি গ্রহণ করবেন না। আমরা সুপ্রিম কোর্ট বারের অফিসকেও বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। শুধু আমাদের নির্দেশনাই মানবেন। অন্য কোনো আদেশ চলবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। আমার নেতৃত্বে গঠিত সমিতির এডহক কমিটিই সম্পূর্ণ বৈধ। তারা (সমিতির নতুন কমিটি) সমিতির ডিগনিটি নষ্ট করেছে।’
এসময় এডহক কমিটির সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল, কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ এডহক কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, এদিন দুপুর দেড়টা থেকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে সরকার সমর্থক আইনজীবীরাও সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ডিম ছোঁড়াছুড়ি শুরু হয়।
এতে নারী আইনজীবীসহ দুপক্ষের ২৫-৩০ জন আইনজীবীর শরীরে ডিমের আঘাত লেগে তা জামা-কাপড়ে লেপ্টে গিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বেশ কয়েকজন আইনজীবীর নাকে, মুখে, মাথায় ডিমের আঘাত লেগে শরীরে ছড়িয়ে যায়। এতে দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ছোটাছুটি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
এর আগে, গত ৩০ মার্চ সমিতির সাধারণ সদস্যদের এক তলবি সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, গত ১৫-১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং আইনজীবী শাহ্ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ হট্টগোল, হামলা, ভাঙচুর, মামলা, সাংবাদিক পেটানো, প্রধান বিচারপতির কাছে নালিশ ও ধাক্কাধাক্কির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দু’দিনব্যাপী নির্বাচন।
সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের সব ক’টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা ভোট দানে বিরত থাকেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও