‘অর্থ সংকট’ ও রাজনৈতিক ‘মতানৈক্যে’ ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট
৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:১৮
ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপার এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর পেছনে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ। প্রধান কারণ হলো নতুন ইভিএম কেনা এবং পুরাতন ইভিএম মেরামত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বরাদ্দ না পাওয়া। দ্বিতীয়ত, ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্যা না থাকা। সর্বশেষ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে— সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন করে ইভিএম কেনা কিংবা পুরাতন ইভিএম মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করার মতো সময় নেই।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সোমবার ( ৩ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইভিএম মেরামতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এক হাজার ২৫৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি জানান, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে স্বচ্ছ ব্যালট বক্স এবং ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য প্রথম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেক্ষেত্রে কমিশন ৮ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু প্রকল্পটি প্ল্যানিং কমিশন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করে। তখন জানানো হয় আগের মেশিনগুলো মেরামত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে পুরাতন ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী করতে হলে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত তরে ব্যবহার উপযোগী করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে নির্বাচনের জন্য অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যাবে বলে কমিশন নিশ্চয়তা দিয়েছে।’
মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘১ লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করে চালু করার জন্য পর্যাপ্ত সময় অর্থ এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। এগুলো অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। পাশাপাশি কিছু কম্পোনেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আমাদের হাতে যে সময় রয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে মেশিন মেরামত করতে সময় স্বল্পতা রয়েছে। এ ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থের নিশ্চতা না পাওয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। এসব কিছু বিবেচনা করে হয়তবা কমিশন আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।’
৫০ থেকে ৬০টি আসনের ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা রয়েছে বারবার এমন কথা বলার পরেও কেন ৩০০ আসনে ব্যালটে নির্বাচন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সব পর্যায়ে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এরইমধ্যে এ কার্যক্রম চলমান আছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।’
শুধু টাকার কারণেই কি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসছেন নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘কমিশনের সচিব হিসেবে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানানোর আইনি অধিকার আমার রয়েছে। তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কী ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল সেটি কমিশন থেকে জানাটি যুক্তিসঙ্গত হবে।’
উল্লেখ্য সোমবার (৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ১৭ তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিবর্তে ৩০০ আসনে ব্যালটে নির্বাচন এবং ৫টি পৌরসভা ও একটি উপজেলা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিক বিষয়টিগুলো অবহিত করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ( সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অপর চার কমিশন ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জিএস/একে