কমানো দামে ‘কোথাও নেই’ এলপিজি
৩ এপ্রিল ২০২৩ ২১:১৬
ঢাকা: আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম সমন্বয় করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আর তা নির্ধারণ হয় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়া-কমার ওপরে। সেই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলের শুরুতেই এলপিজির মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি।
এবার খুচরা পর্যায়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে দাম কমানো হয়েছে ২৪৪ টাকা। কিন্তু কোথাও সে দামে গ্যাস পাচ্ছেন না ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারিভাবে গ্যাসের দাম কমানো হলেও পাইকারি মূল্য কম দামে গ্যাস মিলছে না। তাই তারা নতুন দামে বিক্রি করতে পারছেন না।
রোববার ( ২ এপ্রিল) ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম সমন্বয়ের ঘোষণা দেয় বিইআরসি। সেখানে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের দাম ২৪৪ টাকা কমিয়ে ১১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা ওইদিন সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে না। গ্রাহককে বারো কেজির সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে আগের মতোই অতিরিক্ত দামে। এলাকা ভেদে কোনো কোনো বাজারে প্রতি বারো কেজির সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে, ১৩৫০, ১৪০০, ১৪৫০, এমনকি ১৫০০ টাকা দামে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে সিলিন্ডারগুলো বেশি দামে কেনা ছিল। তাই নতুন নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডিলারের কাছ থেকে বেশি দামে কিনেছি। তাই কম দামে বিক্রি করতে পারছি না। নতুন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, এই দামে বিক্রি করলে বারো কেজির সিলিন্ডার প্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে।’
একই বাজারের নাহার এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, ‘ডিলারদের কাছ থেকে কম দামে কিনতে পারলে আমরাও কমিয়ে দিতে পারব।’
রাজধানীর সেগুন বাগিচার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম সারাবাংলাকে জানান, ‘তিন বছর ধরে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে তাকে। প্রতিমাসে দাম সমন্বয় করা হলেও কোনোদিনই সরকার নির্ধারিত দামে কিনতে পারেন না।’
একই কথা বলেছেন শিপ্রা রায়। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়া কিংবা কমায় তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ সব সময়ই বাড়তি দামে কিনতে হয়।’
বাংলাদেশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর কোষাধ্যাক্ষ আবু তাহের কোরেইশি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যখন নতুন দামের ঘোষণা আসে তখন এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির দিকে তাকিয়ে থাকে যে, কে কত দামে বিক্রি করবে। সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে ১১৭৮ টাকা করে, কিন্তু আমাকে কিনতে হবে ১২০০ টাকা করে, সেখানে সিলিন্ডারপ্রতি আরও ৩০/৪০ টাকা করে খরচ পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে আমরা তো কম দামে কিনতে পারছি না। এখন কিনতে হচ্ছে প্রতি সিলিন্ডার ১২০০ টাকা আর বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩০০ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘এই ১০০ টাকা লাভের মধ্যে গোডাউন ভাড়া, লেবার খরচ এবং পরিবহন খরচ। অতএত খুচরা পর্যায়ে তো এর থেকেও বেশি দামে বিক্রি করবে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলপিজির দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় লোকসান হয় যখন দাম কমানো হয়। কারন বেশি দামে কেনা পণ্য অনেক কম দামে বিক্রি হয়।
বাংলাদেশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর কোষাধ্যাক্ষ আবু তাহের কোরেইশি বলেন, ‘হঠাৎ করে ২৪৪ টাকা প্রতি সিলিন্ডারের দাম কমে গেল। আমাদের তো গোডাউনে আগের সিলিন্ডার রয়েছে, সেখানে সরকারি দাম ধরা ছিল ১৪২২ টাকা করে। এখন আমরা সেই সিলিন্ডার কীভাবে কম দামে বিক্রি করব? কোম্পানির সঙ্গে কথা বললে তারা চুপ থাকে। এখন তো আমাদের মোটা অংকের লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়।’
এ প্রসঙ্গে ওমেরা কোম্পানির সাবেক সিইও শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজার দরের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের একটা গ্যাপ সব সময় থেকে যায়। তবে আমাদের চেষ্টা থাকে সব সময় গ্যাপ কম রাখার।’
বিষয়টি নিয়ে গত ২ এপ্রিল বিইআরসিতে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নও করা হয়। জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন জানান, ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির প্রশাসন ও আইন বিষয়ক সদস্য সচিব ব্যারিস্টার খলিলুর রহমান খান বলেন, ‘বিশ্ববাজারের এলপিজি গ্যাসের কাঁচামালের দাম কমায় আমরা দেশে তার দাম কমিয়েছি। এখন প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে নির্ধারিত মূল্যে গ্রাহকরা গ্যাস কিনতে পারছেন না। বিক্রেতারা বলছেন তাদের কেনা বেশি পড়ছে। অথচ আমরা এলপিজি গ্যাসের অপারেটরদের সাথে আলোচনা করে মূল্যটা নির্ধারণ করে থাকি। তাদের বলা হয়েছে যেন সঠিক মূল্যে গ্যাস বিক্রয় করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্য জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। যেন সঠিক মূল্যে গ্যাস বিক্রয় নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে আমাদের তদারকি থাকবে, যেন অধিক মূল্যে কেউ এলপিজি গ্যাস বিক্রি না করতে পারে।’
সারাবাংলা/জেআর/একে