Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা ‘উৎসুক জনতা’

আসাদ জামান, ঘটনাস্থল থেকে ফিরে
৪ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫২

ঢাকা: বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে  শহীদুল্লাহ হলের পুকুরের পানিই প্রধান ভরসা। চল্লিশের অধিক ফায়ার ইউনিটের অধিকাংশ ইউনিট এই পুকুর থেকেই পানি নিচ্ছে।

হলের পূর্বপাশের গেট দিয়ে ‘হোস পাইপ’ দিয়ে পানি টেনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো। কিন্তু উৎসুক জনতার পায়ের চাপে হোস পাইপগুলো সংকুচিত হওয়ার ফলে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। মাঝেমধ্যে হোস পাইপের সংযোগুলোও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে অথবা পাইপ দিয়ে লিকেজ হচ্ছে পানি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায় ‘শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের’ সামনের সড়ক থেকে শুরু করে বঙ্গবাজার পর্যন্ত, ওদিকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের সড়ক সংযোগ, চাঁনখারপুল মোড় হয়ে বঙ্গবাজার পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষ।


এই উৎসুক জনতার ঢল টপকে ঘটনাস্থলে পানি, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য যন্ত্রপাতি, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছানো খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বারবার অনুরোধের পরও লোকজন সরছে না। প্রচণ্ডরকমভাবে ব্যাহত হচ্ছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উৎসুক জনতাকে সরাতে তাদের ওপর হোসপাইপ দিয়ে পানি ছিটায় ফায়ার সার্ভিস। এসময় উল্টা দিকে দৌড় শুরু হলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকার মালপত্র নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করা ব্যবসায়ীরা লুটপাটের আশঙ্কায় রয়েছেন।

শুধু আগুন নিয়ন্ত্রণ নয়, অগ্নিকাণ্ডের শিকার দোকান মালিকরা যে মালপত্রগুলো বের করতে পেরেছেন, সেগুলোও নিরাপদ স্থলে স্থানান্তর করতে পারছে না। মানুষের জটলার কারণে আশপাশের সড়কগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রিকশা, ভ্যান, কাভার্ড ভ্যানসহ কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না।

বিজ্ঞাপন

হোস পাইট ফিটিংয়ের দায়িত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। কিন্তু সময় যত বাড়ছে উৎসুক জনতার ভিড় তত বাড়ছে। বারবার অনুরোধ করেও তাদের সরানো যাচ্ছে না। পানির পাইপের ওপর দাঁড়িয়ে আগুনের তাকিয়ে আছে অনেকেই। ফলে পানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

‘বিপদে ধৈর্য ধরে সবাইকে দূরে থাকার অনুরোধ করুন। আমরা আমাদের কাজ ঠিক মতো করতে পারলে বিপদ কেটে যাবে ইনশাল্লাহ’— বলেন জাকির হোসন।

দোকানের মালপত্র নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমার দোকান ছিল দোতলা মার্কেটে। আমি যখন এখানে আসি, তখন ভেতরে ঢুকতে পারলে কিছু মালপত্র বের করতে পারতাম। কিন্তু লোকজনের ভিড় এত বেশি ছিল যে, কে দোকানি আর কে সাধারণ পাবলিকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পারায় পুলিশ এবং ফায়ারের লোকজন আমাদের কাউকে ভেতরে যেতে দেয়নি।’

আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা চাঁনখারপুলে। বাসা থেকে আগুন দেখা যায়। তারপরও এখানে আইছি কাছ থেকে আগুন দেখার জন্য। সবাই তো একই কারণে আইছে।’

এই ‘কই কারণে’ আগুন দেখতে আসা উৎসুক জনতাকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য হ্যান্ডমাইকে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছেন পুলশ এবং ফায়ারের কর্মকর্তারা। কিন্তু কোনো অনুরোধই কাজে আসছে বরং ফায়ার কাছ থেকে হোসপাইপ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই লক্ষ্যবস্তুতে পানি ছুঁড়ছেন কেউ কেউ। আর অদূরে নিরুপায় দাঁড়িয়ে আছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা!

সারাবাংলা/এজেড/এমও

আগুন নিয়ন্ত্রণ বঙ্গবাজারে আগুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর