বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি যে ৩ কারণে—
৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:২৪
ঢাকা: মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতই। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮ ইউনিটের চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
তবে ৩টি কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘পানি সংকট, উৎসুক জনতা ও বাতাস— এই তিন কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয়েছে।’
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে বঙ্গবাজারে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন নিজের মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও দেখান উপস্থিত সাংবাদিকদের। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন।
এসময় প্রথম কারণ হিসেবে উৎসুক জনতার কথা উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘উৎসুক জনতার কারণে কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। কোন জায়গা দিয়ে আমরা ফায়ার সার্ভিস কাজ করব। কোথায়, কিভাবে ফায়ার সার্ভিসের লোক কাজ করবে? আমরা তো আপনাদের জন্যই জীবন দিচ্ছি।’
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আগুন নেভাতে পানির স্বল্পতার কথা জানান মহাপরিচালক। মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘সেনাবাহিনীর পানির বাউজার এনে এবং ওয়াসাও পানির বিষয়ে সহায়তা করেছে।’
ঘটনাস্থলে অনেক বাতাস থাকার কথা জানিয়ে ডিজি বলেন, ‘বাতাস ছিল অনেক। বাতাসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আগুন চলে গেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়েছে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ওয়াসাসহ অনেক বাহিনী ও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে।’
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ জনগণ আহত হওয়ার তথ্য জানা নেই বলেছেন মো. মাইন উদ্দিন। তবে ফায়ার সার্ভিসের আট জন আহত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে দু’জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা বেশ খারাপ।’
ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘আগুন লাগা মার্কেটটি ও ফায়ার সার্ভিসের অফিস রাস্তার এপাশ-ওপাশ। আমি ফায়ার সার্ভিসের ডিজি হিসেবে বলতে চাই, আমাদের ওপর কেন হামলা হলো? কারা করেছে? এ ঘটনায় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অফিসার ও সব পদবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানুষের জন্য জীবন দেন।’
গত একবছরে ১৩ জন ফায়ার ফাইটার শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ‘নিহত ১৩ ফায়ার ফাইটার অগ্নিবীর খেতাব পেয়েছেন। এছাড়া ২৯ জন আহত হয়েছেন। আজ আমাদের আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। কেন বা কারা ফায়ার সার্ভিসের ওপর আঘাত আনলো তা আমার বোধগম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস সব দুর্যোগে সবার আগে মানুষের পাশে থাকে। তারপরও কেন আমাদের সদস্যদের ওপর আক্রমণ, কেন আঘাত? এ আগুনের সুষ্ঠু তদন্ত আমরা করবো এবং আপনাদের জানাবো।’
ডিজি জানান, ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ৬টা ১২ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।
এদিকে বঙ্গবাজারের আগুন ছড়িয়ে পড়ে মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে। সেই আগুনে পুড়েছে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ভেতরের চার তলা পুলিশ ব্যারাক ভবনও।
ব্রিফিংয়ে আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও এক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার মার্কেটের আড়াই হাজারসহ আশপাশের মার্কেট সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছে দোকান মালিক সমিতি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটেই আড়াই হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এখানে ছোট ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান করেন। সামনে ঈদ, সবাই ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার জন্য পণ্য তুলেছেন দোকানে। এমন সময় এ অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে।’
সারাবাংলা/এসবি/এমও