।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশে পাকা আমের মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। এমনকি কোথাও পাকতেই শুরু করেনি আম। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পাকা আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একাধিক দোকানেও রয়েছে এসব আম। ‘সাতক্ষীরার আম’ বলে বিক্রি করা হলেও কোনো কোনো বিক্রেতা স্বীকার করছেন, এসব পাকা আমের বেশিরভাগই ভারতীয়। ঝরে পড়া আম কৃত্রিম উপায়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও স্বীকার করলেন কেউ কেউ। ফলে এই আমে রয়েছে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। তবে এ নিয়ে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি ও ভোক্তা অধিদফতর— কারো নজরদারির মধ্যেই নেই বিষয়টি।
সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেল, অন্তত পাঁচটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে পাকা আম। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজারে রয়েছে এমন পাকা আম। এমন একজন দোকানি হেমায়েত। তার দোকানে কাঁচা আমও রয়েছে। তিনি সারাবাংলাকে জানান, সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ জাতের আম এগুলো। বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে। একই রকম তথ্য জানান আশপাশের দোকানিরাও।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের কাছে অস্থায়ী দোকানের ফল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন। ২৯ বছর ধরে তিনি এখানে ফলের ব্যবসা করছেন। তার দোকানেও ঝুলছে পাকা আম। জানতে চাইলে সারাবাংলাকে আনোয়ার বলেন, ‘এগুলো ভারতীয় আম। সাতক্ষীরার আম এখনও নামেনি। সাতক্ষীরার আম জৈষ্ঠ্য মাসে বাজারে আসবে। আবার কিছু কিছু আম আছে যেগুলো ঝড়ের মধ্যে গাছ থেকে পড়ে গেছে। সেগুলোকে পাকানো হয়েছে।’
আমের স্বাদ কেমন— জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখনও খেয়ে দেখিনি। তাই বলতে পরব না।’ দোকানটিতে পাকা আম দেখছিলেন এক ক্রেতা। দোকানির এই জবাব শুনেই বলে উঠলেন, ‘আপনি যেহেতু খাননি, তাই আমের স্বাদও ভালো না। বুঝতে পেরেছি।’ বলেই হাত থেকে আম রেখে ওই ক্রেতা স্থান ত্যাগ করেন।
আনোয়ার জানালেন, ৯০ টাকা কেজিতে তিনি এসব আম কিনেছেন। বিক্রি করছেন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। কারওয়ান বাজারের মতো একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর তেজগাঁও, বাংলামোটর ও মহাখালীতেও।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেনে-বুঝেও তারা কেবল স্বাদ উপভোগ করতেই এসব আম কিনছেন। কাউকে কাউকে দুয়েকটি আমও কিনতে দেখা গেছে। আশরাফুল নামের এক ক্রেতা সারবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজিতে এক কেজি আম কিনি। আমগুলো যে সুস্বাদু বা মিষ্টি— তাও নয়। আবার মিষ্টি যে না, এমনও নয়।’
আমের মৌসুম সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘পাকা আমের মৌসুম শুরু হতে আরও সময় লাগবে। তবে কিছু কিছু আম ভারত থেকে আসছে বলে আমরা শুনেছি। আমার মনে হয় না, এ আমগুলো সরাসরি আমদানির মাধ্যমে এসেছে।’ অধিদফতরের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব আম কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয়ে থাকে। এতে স্বাস্থ্যহানির শঙ্কা রয়েছে।
মৌসুম শুরু না হলেও বাজারে কেন পাকা আম— এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ বিষয়টি সাধারণত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে থাকে।’ তবে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারব্যবস্থা মূলত টিসিবি ও ভোক্তা অধিদফতর দেখে থাকে। তবে এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্ব ঠিক কোন প্রতিষ্ঠানের, তা জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।
আর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর সারাবাংলা’কে বলেন, ‘কোনো ভোক্তা আমাদের কাছে অভিযোগ জানালে আমরা বিষয়টি তদারকি করব। মৌসুমের আগেই আম বিক্রি হলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook