বঙ্গবাজারে এখনও থেমে থেমে জ্বলছে আগুন
৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫০
ঢাকা: দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরও আগুন পুরোপুরি নেভেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও থেমে থেমে জ্বলছে। মহানগর মার্কেট ও পেছনের একটি ভবনে হালকা আকারে আগুন জ্বলছে।
মার্কেটের মূল আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এই প্রতিবেদন লেখার সময় (বুধবার, ৫ এপ্রিল ভোর ৫টা ৪০ মিনিট) ফায়ার সার্ভিসের ৩৫টি ইউনিট কাজ করছে। রাত ১২টার দিকে ৪০ ইউনিট কাজ করছিল।
বুধবার (৫ এপ্রিল) সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসাইন।
বুধবার (৫ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মূলত ডাম্পিংয়ের কাজ করছিলেন। তবে থেমে থেমে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া গেলেই সেদিকে ছুটে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
চলমান উদ্ধার তৎপরতার কারণে আশেপাশে কিছু সড়ক বন্ধ দেখা যায়। আশপাশের দোকানপাটও বন্ধ ছিল। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন। উৎসুক জনতার ভিড় এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ ভিড়ের মধ্যেই মালামাল যতটা সম্ভব রক্ষা করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন এনেক্সকো টাওয়ারের দোকানি ও কর্মচারীরা। ভবনের চার, পাঁচ, ছয় ও সাততলা থেকে মালামাল নিচে ছুড়ে মারছিলেন কর্মীরা।
বিশেষ করে এনেক্সকো ভবনের ওপরে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। তারা তাদের দোকানে রয়ে যাওয়া মালামাল বস্তাবন্দী করে নিচে ফেলছেন। নিচ থেকে ভ্যানে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগীরা।
বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, দোকান পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার (৫ এপ্রিল) সকালে ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করবে। তারা ক্ষতিপূরণ চাইবে।
স্থানীয়রা জানান, রাত ১২টার একটু আগে কিছু বহিরাগত মানুষ এসে আগুন লাগা মার্কেটে বিভিন্ন জিনিসের খোঁজ করছেন। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।
সরেজমিনে রাত ১টার দিকে ইসলামিয়া মার্কেটের দিকে ছিন্নমূল মানুষকে ভালো কাপড় খুঁজতে দেখা গেছে।
মূলত, রাতে মহানগর মার্কেটের দক্ষিণে ও এনেক্সকো মার্কেটের পূর্ব দিকের অংশের আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরাও। বঙ্গবাজার টিনশেড মার্কেটের আশেপাশেও দেখা যায় মানুষের উপস্থিতি।
রাত ৩টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবাজারে থাকা মানুষদের জন্য সেহরি নিয়ে আসেন অনেকেই। একইসঙ্গে এ সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও সেহরি সরবরাহ করা হয়।
সেহরির শেষে নামাজের সময় ভিড় কিছুটা কমে আসে। ভোর পাঁচটার দিকে উৎসুক জনতার উপস্থিতি দেখা গেলেও তা তুলনামূলক কম ছিল।
ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগুন নিভে গেলেও থেমে থেমে কিছু স্থান থেকে আবার জ্বলে উঠতে দেখা যাচ্ছে। মার্কেটে কাপড়ের দোকানের সংখ্যা বেশি থাকায় এখনো সম্পূর্ণভাবে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরও চারটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে।
আগুন লাগার পর প্রথমে একটি মোবাইল নম্বর থেকে এবং পরে ৯৯৯ থেকে খবর পান বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও ওয়াসাসহ অনেক বাহিনী ও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে।
তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ জনগণের হতাহতের কোনো তথ্য জানা নেই। তবে ফায়ার সার্ভিসের আট জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা বেশ খারাপ।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় পার্শ্ববর্তী পুলিশ সদর দফতরেও এর প্রভাব পড়ে। এ পরিস্থিতিতে সাময়িক বন্ধ রাখা হয় ৯৯৯ জরুরি সেবা। সাড়ে সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটের দিকে আবারও চালু হয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম।
সারাবাংলা/এসবি/আইই