‘পদ্মা সেতু শুধু একটা সেতু নয়, বাঙালির গর্ব ও সক্ষমতার প্রতীক’
৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:১৮
ঢাকা: পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যে পারে এটা কিন্তু বিশ্ববাসীকে দেখাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের অহংকার ও গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতু। এটা শুধু একটা সেতু নয়, এটা বাঙালি জাতির গর্বের প্রতীক, সক্ষমতার প্রতীক।
বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে গণভবনে পদ্মা সেতু নির্মাণের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারি ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯ টাকা সরকারকে পরিশোধ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। সরকারের অর্থ বিভাগ সেতু কর্তৃপক্ষকে এই টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছিল। ১৪০টি তিন মাসের কিস্তিতে আগামী ৩৫ বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের দেওয়া সব ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে চেক হস্তান্তর করেন। এর পর অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের কাছে চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশে আমরা যে উন্নয়ন করে যাচ্ছি, তিনি ঠিক যেভাবে শুরু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়েই কিন্তু স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি- সে কথাটা মাথায় রাখতে হবে।’
জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ লাইনটি স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, এটা খুবই দুঃখজনক। অবাঞ্ছিত একটা ঘটনার জন্ম নিয়ে এই সেতু নির্মাণে আমাদের শুধু বাধাই দেওয়া হয়নি, একটা বদনাম দিতে চেয়েছিল। যেটা আমরা চ্যালেঞ্জে হিসাবে নিয়েছিলাম।’
এর পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘পদ্মা নদী বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী। কাজেই এখানে সেতু নির্মাণ করা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। তাছাড়া আমাদের যে ভূ-প্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ- সবকিছু মিলে এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছি। জাতির পিতা স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছেন এবং আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। একটি বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের মাঝে যে একটা আত্মমর্যাদাবোধ থাকার কথা সেখানেই বিরাট একটা ঘাটতি লক্ষ্য করতাম সবসময়। যে কারণে একটা সিদ্ধান্ত হলো যে, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে যেদিন হবে সেদিনই করব। তাছাড়া আমরা করব না। একটা সংস্থা আমাদের এভাবে অপমান করবে, আর আমরা সেটা মুখ বুজে সয়ে নেব- এটা কখনো গ্রহণযোগ্য না।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি- একটা সময় এমনও গেছে যে, খুব বেশি মানুষের কাছ থেকে আমি কিন্তু সমর্থন পাইনি। বলা হয়েছিল এটা কখনোই সম্ভব না। এটা শুধু আমার দেশে নয়, আমি অনেক বিদেশি সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি যে, অনেকেরই এরকম একটা ধারণা- বিশ্বব্যাংক যখন সরে গেছে এটা কঠিন হবে। তার মাঝে একটি দেশের সমর্থন আমি সম্পূর্ণভাবে পেয়েছিলাম। সেটা মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। তিনি বলেছেন, এটা করা যায়।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব। কিন্তু টাকা কীভাবে কোথা থেকে আসবে? টাকা তো আর সব একসঙ্গে লাগবে না। যা হোক আমরা সেতু কর্তৃপক্ষ অথরিটি করলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অল্পসুদে ঋণ নেওয়া হলো। এভাবে আমরা একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছি বাংলাদেশের জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে পদ্মার দুই পাড়ের কয়েকশ লোক তাদের জমি সিগনেচার করে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বলেছে, আপনি সেতু করেন। আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হোক, নিজের হোক- সব দিয়ে দেব।’ এ সময় তাদের জমির সমস্ত পর্চা পাঠিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই সময় সাধারণ মানুষের আত্মমর্যাদা বোধের বিষয়ে গর্ব প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াল। এই সাধারণ মানুষের মর্দযা বোধটা কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, বড় প্রেরণা।’
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাধা পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জনগণের জন্যই আমার কাজ। সেই জনগণের সমর্থনই হচ্ছে আমার মূল শক্তি। আর কোনো শক্তি নয়। বাংলাদেশের জনগণ পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে অসাধ্য সাধন করেছি। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুখটা উজ্জ্বল করতে পেরেছি এবং আমাদের সক্ষমতা দেখাতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ পদ্মা সেতুর টোল থেকে ঋণ পরিশোধ করতে পারছি। এজন্য পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের মাননীয় মন্ত্রীকেও ধন্যবাদ। আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আর বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, হ্যাঁ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা যায়, আমরা করেছি। বাংলাদেশ তার সক্ষমতা দেখিয়েছি বিশ্বকে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাঙালি জাতি পারে। জাতির পিতার কথাই বাস্তব। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম