ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। আগুন নেভানোয় ধীরগতির অভিযোগ এনে হামলা চালানো হয়।
পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)-এর অপরাধ বিভাগ ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ। হামলার সঙ্গে জড়িতদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুধবার (৫ এপ্রিল) পুলিশ সদর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে যারা হামলা করেছে, প্রধানমন্ত্রী তাদের খুঁজে বের করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এরকম দুঃসাহস দেখাতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের শনাক্তে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশ মাঠে নেমেছে। কারা হামলা চালিয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। হামলাকারীরা সবাই ব্যবসায়ী, নাকি উৎসুক জনতাও রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলাকারীদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। হামলায় কে নেতৃত্বে দিয়েছে ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে তা খোঁজা হচ্ছে। এছাড়াও যারা হামলা চালিয়েছে ও পুলিশকে মারধর করেছে এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে তাদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নেমেছে। তারা কাজ করছে। কারা হামলা চালিয়েছে তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল তা খোঁজা হচ্ছে। শিগগির হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার অভিযান চালানো হবে।
এদিকে, গ্রেফতার অভিযানের খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আগুনে আমাদের সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আমরা দিশেহারা। এর মধ্যে যদি গ্রেফতার অভিযান চালানো হয় বা পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয় তাহলেতা এটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ -এর মতো।
পুড়ে যাওয়া মা শাড়ী ঘরের মালিক ওবায়দুল কবির বলেন, আগুন ৬টা ১০ মিনিটে লাগে। যেখানে আগুন লেগেছে সেখান থেকে সামান্য দূরত্বে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর। দুই মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস চলে আসে। কিন্তু গাড়িতে পানি ছিল না।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার’ বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। পরবর্তীতে পানির গাড়ি আনা হলেও ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর হেলিকপ্টার এসে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। হেলিকপ্টার দিয়ে পানি এনে আগুনে না দিয়ে পুলিশের ভবনে ফেলা হয়। সবকিছু মিলে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে প্রবেশ করে ভাংচুর চালায়। এখন তাদের গ্রেফতার করা হলে তারা কী করবে?
পুড়ে যাওয়া এশিয়ান গার্মেন্টসের মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিস চাইলে আগুন শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত। কারণ অন্য জায়গায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট সময় লাগে। এতে আগুন অনেকখানি ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। অথচ বঙ্গবাজারের আগুন লাগার পর মাত্র দুই মিনিটেই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের নাকের ডগায় আগুন লাগলো, অথচ নেভাতে পারল না। দিশেহারা ব্যবসায়ীরা এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এখন তাদের হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হলে, সাধারণ ব্যবসায়ীরা কী করবে আপনারাই বলে দেন? আমাদের তো সবই গেছে। ঈদের আগে সবাই বউ-বাচ্চা নিয়ে আনন্দ করবে অথচ আমরা পোলাপানদের ডাল-ভাতও খাওয়াতে পারব না। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণ কিভাবে পরিশোধ হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা রীতিমত দিশেহারা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, গাড়িতে পানি ছিল না এরকম তথ্য সঠিক নয়। যেহেতু পানির গাড়ি বঙ্গবাজারের মতো ঘিঞ্জি দোকানের গলিতে ঢুকতে পারে না তাই ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার’ নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রত ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগুন নেভাতে না পারলেই কি সদর দফতরে হামলা করতে হবে? ফায়ার ফাইটারদের মারধর করতে হবে? পুলিশের গাড়িতে হামলা করতে হবে?। এটা কেন হবে?। আমরা যে ১০ বার নোটিশ দিয়েছিলাম-এই মার্কেট অতি ঝুঁকিপূর্ণ, তখন ব্যবাসায়ীরা আমলে নিলেন না কেন?। বারবার বলার পরও ব্যবসায়ীরা শুনলেন না বরং হাইকোর্টে গিয়ে আমাদের নির্দেশনাকে স্থগিত করে দিলেন?
উল্লেখ্য, ৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুনের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। হানিফ ফ্লাইওভারের দিকে আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের সাড়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।