Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করছে চসিক, মাটিধসে নিহত ১

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ এপ্রিল ২০২৩ ২০:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে পাহাড় কাটার সময় ভূমিধসে এক শ্রমিক নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাহাড় কেটে সড়কটি তৈরি করছিল, যেখানে দুই মাস আগে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছিল।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে।

পাহাড়ধসে গুরুতর আহত অবস্থায় খোকা নামে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন বলে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক জানিয়েছেন।

আহত চারজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।

ঘটনাস্থলে যাওয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, আকবর শাহ কবরস্থানের পেছনে রেলওয়ে হাউজিং সোসাইটির শেষপ্রান্তে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পাহাড় কেটে একটি সড়ক তৈরি করা হচ্ছিল। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে পাহাড়টি কাটা হচ্ছিল। পাহাড়ধসের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক হারুন পাশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির কাজ চলছিল। ১০ জন শ্রমিক কাজ করছিল। এর মধ্যেই উপর থেকে মাটি ধসে পড়ে। আমরা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন তিনজনকে উদ্ধার করেন। তারা জীবিত আছেন। একজন নিজেই হেঁটে বেরিয়ে যান। আরেকজনকে আমরা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তিনি মারা গেছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজনরা বলছেন, ১০ শ্রমিকের মধ্যে চারজন অক্ষত আছেন। একজন নারী শ্রমিক নিখোঁজ আছেন বলে আমাদের কাছে তার স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রেখেছি।’

এদিকে পাহাড়ধসের খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছিল। একটি রাস্তা তৈরির কাজ চলছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কাজটি করছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসন গত ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে অভিযান চালিয়েছিল। আমরা পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে আবারও পাহাড় কাটা হচ্ছিল।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সড়ক নির্মাণের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে পাহাড়ের পাদদেশে একটা হাউজিং সোসাইটি আছে। সোসাইটির লোকজন পাহাড় কেটে মাটি এনে জমা করছিল পাহাড়ের পাদদেশে। সোসাইটির পাশ দিয়ে যে সড়ক, সেটার কাজ চলছে। এডিবির অর্থায়নে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণের কাজ চলছে। কারণ, প্রতিবছর বর্ষাকালে এখানে পাহাড়ের বিভিন্নঅংশ ধসে পড়ে। তখন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।’

‘এ জন্য আমরা রাস্তাটার কাজ করছি। একইসঙ্গে পাহাড়ধস ঠেকাতে গাইড ওয়াল নির্মাণ করছি। সেটা করতে গিয়ে হাউজিং সোসাইটির লোকজন যে মাটিগুলো পাহাড়ের পাদদেশে জমা করেছে, সেগুলো এসে কাজের সময় শ্রমিকদের ওপর পড়েছে। মূল সমস্যা এটিই।’

প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন, সেটা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বেলতলীঘোনায় অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার সময় হাতেনাতে একজনকে গ্রেফতার করে সাতদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। জব্দ করা হয়েছিল পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত এক্সাভেটর।

স্থানীয় বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালানোর পর কয়েকদিন বন্ধ ছিল। এরপর আবার শুরু হয়। এখন রাস্তার গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছিল। খাড়াভাবে পাহাড় কেটে ফেলায় ওপর থেকে মাটি ধসে পড়ে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির কাজ করছিল বলে অভিযোগ করেন মোশাররফ হোসেন ও মোহাম্মদ বাবুলসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন।

ফেব্রুয়ারিতে অভিযানের পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, বেলতলীঘোনার পাহাড়তলী মৌজায় প্রায় ১১ একর আয়তনের একটি পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ কেটে সমতল করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল। রেকর্ডমূলে সেই পাহাড়ের মালিক ‘অগ্রণী ব্যংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি’। তবে সোসাইটির কেউ পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও ইসমাইলসহ আরও কয়েকজন মিলে সিটি করপোরেশনের সড়ক তৈরির নামে পাহাড় কাটছিল।

জহুরুল আলম জসিম (৫৩) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক।

গত ২৬ জানুয়ারি নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে হামলার অভিযোগ আছে এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদফতর।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

এদিকে পাহাড়ধসের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

এনডিসি মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, কমিটিতে জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি), চসিক মেয়র, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পরিবেশ অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধি এবং আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সদস্য করা হয়েছে। কমিটিতে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

পাহাড়ধসে নিহত ব্যক্তির সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে বলে এনডিসি জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

টপ নিউজ পাহাড় ধস মাটিচাপা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর