Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বলিখেলা ফিরছে না লালদিঘীর মাঠে, এবারও হবে রাস্তায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শত বছরের ভেন্যু লালদিঘীর ময়দানের পরিবর্তে এবারও চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলিখেলা হচ্ছে মাঠের সামনে গোলচত্বরে। সংস্কার করে লালদিঘীর মাঠ উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরও সেখানে কেন বলিখেলা হবে না, এ নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর লালদিঘীতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন লাইব্রেরি মিলনায়তনে ‘আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা কমিটির’ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলিখেলা ও বৈশাখী মেলার সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

আব্দুল জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানিয়েছেন, এবছর বলিখেলার ১১৪ তম আসর হবে। প্রতিবছরের মত এবারও ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল বলিখেলা হবে। বলিখেলা উপলক্ষে তিন দিনের বৈশাখী মেলা হবে। মেলা শুরু হবে ২৪ এপ্রিল। চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনা কাটিয়ে ২০২২ সালে জাঁকজমকভাবে ১১৩ তম আসরের প্রস্তুতি নেয়া হলেও শেষমুহুর্তে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বলিখেলার ভেন্যু লালদিঘী মাঠ সংস্কার করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ঘোষণার ইতিহাসের আলোকে স্থায়ী মঞ্চ, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ আরও কিছু স্থাপনা তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় এবং রমজান বিবেচনায় নিয়ে বলিখেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল কমিটি।

এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ঐতিহাসিক আয়োজনের দায়িত্ব নেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়রের তত্ত্বাবধানে লালদিঘী মাঠের পরিবর্তে গোলচত্বরে বলিখেলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মেলা কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, এবারও গোলচত্বরে বলিখেলার প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর লালদিঘী ময়দান উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপরও লালদিঘী মাঠের বাইরে বলিখেলার আয়োজন নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। তবে এ বিষয়ে কমিটির সঙ্গে বসে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে জব্বারের বলিখেলাকে বিশ্বদরবারে সুপরিচিত করতে ‘আব্দুল জব্বার স্মৃতি বলি প্রশিক্ষণ একাডেমি’ করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ জব্বারের বলিখেলা হয়। এই বলিখেলা শুধু খেলা নয়, এটি বাঙ্গালি সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সারাবিশ্বে এই বলিখেলাকে ছড়িয়ে দিতে আমরা একটি প্রশিক্ষণ একাডেমি করব।’

কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, ‘টানা দুই বছর আমাদের জব্বারের বলিখেলা হয়নি। গতবছর মেয়রের পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা করেছিলাম। এবারও আমরা কোনো স্পন্সর পাইনি। মেলার সময় ঈদের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এবারও মেয়র মহোদয় আমাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। এই খেলাকে আমরা রক্ষা করতে চাই।’

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আকতার আনোয়ার চঞ্চল, তাপস দে, অপূর্ব বড়ুয়া, চসিক কাউন্সিলর নীলু নাগ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলিখেলা’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলিখেলার সূচনা করেন তিনি। সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলিখেলা। বলিখেলার এক দিন আগে ও পরে তিন দিন লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।

সারাবাংলা/আইসি/আইই

জব্বারের বলি খেলা টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর