Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এলএনজি আমদানি বাড়ছে, টার্মিনাল হবে আরও ৩টি

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৬

ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশে দিন দিন বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ না বেড়ে বাড়ছে ঘাটতি। এদিকে, দেশীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও আপাতত কম। ফলে গ্যাস আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই জোর দিচ্ছে সরকার। এছাড়া, আমদানি করা এলএনজির জন্য আরও তিনটি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানিতে আরও দু’টি চুক্তি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে এলএনজির টার্মিনাল নির্মাণের বিকল্প নেই। অদূর ভবিষ্যতে শিল্প কারখানা বাড়বে, সেইসঙ্গে বাড়বে গ্যাসের চাহিদা। সেই চাহিদা মেটাতে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। সেজন্য নতুন তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান।

বিজ্ঞাপন

আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) দেশে আনার পর তা রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। আর এর জন্য বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালীতে দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে। একটি স্থাপন করেছে আমেরিকান কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি, আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ। এই দুই টার্মিনালের গ্যাস রূপান্তর সক্ষমতা দিনে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ঘনফুট। যদিও প্রতিদিন রূপান্তর ৮৫ কোটি ঘনফুটের উপরে ওঠে না বলে জানা গেছে। এই সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার কাজ করছে।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় দেশে এখন বছরে এলএনজি আমদানি করা হয় ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিকটন (এমটিপিএ)। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ছয় কার্গো এলএনজি দেশে এসেছে। এ বছর ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার এই প্রতিবেদকের কাছে তিনটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অগ্রগতির বিস্তারিত তুলে ধরেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দু’টি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। যেখানে সক্ষমতা অনুযায়ী পুরোপুরি গ্যাস রূপান্তর সম্ভব হয় না। এদিকে দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। আপাতত প্রাকৃতিক উৎস থেকে গ্যাস পাওয়ার বড় সম্ভাবনা দেখছি না। সেজন্য এলএনজি আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গ্যাসে ভাসছে। এক সময় সমুদ্রে যদি গ্যাস আবিষ্কার হয়- সে গ্যাসও প্রসেস করে নিয়ে আসতে ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যাবে। ততদিন কি আমরা অন্ধকারে থাকব? আমাদের তো অস্থায়ী কিছু ব্যবস্থা নিতেই হবে। সেজন্য এ টার্মিনাল নির্মাণ অনিবার্য। এখন আমরা ১৫ বছরের চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করছি। এরপর যদি আমরা দেশীয় গ্যাস পেয়ে যাই, সেটা প্রসেস করতে করতে এই চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। তখন আর চুক্তির মেয়াদ বাড়াব না।’

সূত্র জানায়, নতুন তিনটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে মহেশখালীতে একটি ভাসমান ও একটি ভূমিভিত্তিক হবে। আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল হবে পায়রাতে। এগুলোর রূপান্তর সক্ষমতা হবে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, পায়রায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এই টার্মিনালের রূপান্তর সক্ষমতা দিনে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ঘনফুট। প্রাথমিকভাবে ৫০ কোটি ঘনফুট করা হবে, পরে তা ১০০ কোটিতে উন্নীত করা হবে।

তিনি আরও জানান, অন্যদিকে আরেকটি ভাসমান ও একটি স্থলভিত্তিক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ভাসমান টার্মিনালটি নির্মাণের কথা রয়েছে সামিট গ্রুপের। এছাড়া মহেশখালীতে প্রথম স্থলভাগে নির্মাণ করা হবে আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল। এই টার্মিলারের রূপান্তর সক্ষমতা প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি ঘনফুট হবে। পরে আরও ১০০ কোটি ঘনফুট যোগ হবে। এর জন্য জমিও নির্ধারণ হয়ে গেছে বলে জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।

টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেসব নিয়েও কথা বলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস পেতেও অনুসন্ধান চালাচ্ছে বাপেক্স। পাশাপাশি আগামী ২ থেকে আড়াই বছরের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন ও ডেভেলপমেন্ট করছি। আমাদের বাপেক্সের সক্ষমতা দিয়ে অথবা বাইরের কোম্পানির মাধ্যমে যেভাবে হোক এখান থেকে পাঁচ থেকে ছয়শ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো যোগ হবে। এর ফলাফল পজিটিভ হতে পারে, আবার সবগুলো মাইনাস হতে পারে। সেজন্য আমাদের কিছু গ্যাস বাইরে থেকে এনে চাহিদা পূরণ করতে হবে।’

পায়রা ও মহেশখালীতে ভাসমান দুই টার্মিনাল দ্রুতই স্থাপন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জায়গা নিয়ে সমস্যা না হলে নির্বাচনের আগেই ল্যান্ডবেইস টার্মিনালের কাজ শুরু করা যাবে।’ এলএনজি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি তো দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় আসবে। দেখুন, এবার অনেক দাম বাড়ার পরেও আমরা কিন্তু চুক্তির সময় যে দাম ধরা হয়েছিল সেই দামে গ্যাস পেয়েছি। দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির সুবিধাই হলো এটা।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে ভুর্তুকি কমানোর নির্দেশনা রয়েছে। তার পরও যদি এলএনজির আমদানি বাড়ানো হয়, তাহলে সে অর্থ কোথা থেকে আসবে? এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে সরকার আস্তে আস্তে ভর্তুকি কমিয়ে দেবে, এটা সত্য। এবার যা ভর্তুকি পেয়েছি আগামীতে পাব কিনা নিশ্চিত না। সেজন্য তো কিছু সমন্বয় করতে হবে। সেটা পরের বিষয়। কারণ, দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় তো আমরা এলএনজি পাচ্ছি। স্পট মার্কেট থেকে যদি ১৫ ডলারের নিচে কিনতে পারি তাহলে আমাদের ভুর্তুকি দরকার হবে না। দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় আমরা তো ১১/১২ ডলারে এলএনজি পাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদানি করা এলএনজির ২০ শতাংশ আমরা স্পট মার্কেট থেকে কিনে থাকি। সেটা কমে কিনতে পারলে নতুন করে গ্যাসের দাম হয়তো বাড়াতে হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলে এখন খোলাবাজার থেকে এলএনজি কেনার অপশন বাদ দিতে পারি। কিন্তু যখন দাম আরও কমে যাবে, তখন তো এই সুবিধা পাব না। সেজন্যই আমদানি করা গ্যাসের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমরা স্পট মার্কেটের জন্য রাখব, যাতে ব্যলেন্স হয়। কখনো লোকসানে যাব, কখনো লাভে চলে আসব।’

২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। কাতার ও ওমানের সঙ্গে দু’টি দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় বছরে ৫৬টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে আনুপাতিক হারে এলএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়। যে কারণে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেশি থাকলেও চুক্তির দামেই আমদানির সুযোগ থেকে যায়।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের সঙ্গে নতুন করে দু’টি চুক্তির আলোচনা চলছে। শিগগিরই ওমানের সঙ্গে একটি চুক্তি অনুস্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। কাতারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত।

উল্লেখ্য, দেশে এখন দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে সর্বোচ্চ সরবরাহ হচ্ছে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে ২২৫ ঘনফুট, আর বাকি চাহিদা আমদানি করা এলএনজি থেকে মেটানো হয়।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

আমদানি এলএনজি টার্মিনাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর