Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহী সিটিতে লিটনকেই চায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৩৭

রাজশাহী: মহানগরীর তালাইমারী এলাকা। একটি চায়ের স্টলে ইফতারের পর বেশকিছু মানুষের আনাগোনা। চলছে কথার পিঠে কথা। আলোচনার বিষয়বস্তু রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বললেন, ‘প্রার্থী যেই হোক না কেন আমাদের ভোট দিতে যেতে হবে। ভোট দেওয়া তো নাগরিক অধিকার।’

সোলায়মান নামের আরেক ব্যক্তি বললেন, ‘যদি জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো তাহলে সরকারি দল আরও জনপ্রিয়তা পেত। এই সরকারের আমলে পুরো রাজশাহী শহরের চেহারা পাল্টে গেছে। উন্নয়ন তো চোখেই দেখা যাচ্ছে।’ তার কথা ধরে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘রাজশাহীর শহরে সড়কের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের এই রাস্তাটি চারলেন হয়েছে। তালাইমারী থেকে কাটাখালী পর্যন্ত চারলেনের কাজ চলছে। তবে রাজশাহীতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে আরও ভালো হতো।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী পাটকল, চিনিকল, টেক্সটাইল মিল বন্ধ। বন্ধ রেশম কারখানা আংশিকভাবে খুলেছে। এগুলো যদি পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয় তাহলে ফের মানুষজন কর্মে ফিরতে পারবে।’

গত ৩ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তিন ধাপে হবে এই নির্বাচন। সর্বশেষ ধাপে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী ও সিলেটে। এদিকে, তফসিল ঘোষণার পরই প্রচারে নেমেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে মেয়রে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও তাদের প্রচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শহরে এখন পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে এমন ভোটের আলোচনা শুরু হয়েছে। চলছে পাওয়া না পাওয়া হিসেব। চলতি মেয়াদে নগর পিতাসহ কাউন্সিলরা কী দিয়েছেন তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নগরবাসীর প্রত্যাশা, যেই মেয়র নির্বাচিত হোক না কেন নগরের উন্নয়ন আগের মতো যেন অব্যাহত থাকে। পিছিয়ে পড়া একটি বিভাগীয় শহর অনেক এগিয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে এবারও তাই হবে।

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীর সাধারণ মানুষ ভোট নিয়ে এত হিসাব-নিকাশ করলেও প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে কোনো হিসাব-নিকাশে নেই আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি নগর আওয়ামী লীগের এক সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেছেন, ‘প্রার্থী নিয়ে চিন্তার কোনো অবকাশ নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন খায়রুজ্জামান লিটন। আমরা তাকে ফের জয়ী করেই আনব।’

মোহাম্মদ আলী কামালের এ কথার পর হাততালি দিয়ে সমর্থন দেন সভায় উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবশ্য এই সভায় ডাকা হয়নি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে। ডাবলু সরকার সিটি অথবা সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন। সম্প্রতি তার একটি আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হলে দলের নেতাকর্মীদের বড় অংশই তাকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। দাবি উঠেছে তাকে বহিষ্কারের। তাই নগর আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতেও তাকে ডাকা হয়নি।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় প্রধান চাইলে তিনি প্রার্থী হবেন। তিনি না চাইলে প্রার্থী হবেন না। যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন, তার জন্যই নির্বাচনে কাজ করব।’

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘সিটিতে খায়রুজ্জামান লিটনের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী হয় না। তার বিকল্প হিসেবে আমরা কাউকে ভাবছি না। রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে আরও পাঁচ বছর তার মেয়র থাকা প্রয়োজন। তবে কোনো কারণে তিনি (লিটন) প্রার্থী না হলে আমি নির্বাচন করব। দল মনোনয়ন দিলেও করব না দিলেও করব।’

প্রার্থিতা প্রসঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটন অবশ্য নিজের কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। দলের সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিই চূড়ান্ত বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, খায়রুজ্জামান লিটন দু’বার মেয়র হয়েছেন। তিনি প্রতিবারই শহরে প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। এখন রাজশাহী পরিচিতি পেয়েছে দেশের সেরা শহর হিসেবে। তাই আসছে নির্বাচনেও লিটনকে দলীয় প্রার্থী করা হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। পরের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে। তারপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই বুলবুলকেই পরাজিত করে আবার মেয়র হন লিটন।

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হলেও বিএনপি রাসিক নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক ও রাসিকের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। সুতরাং সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো মাথাব্যথা বিএনপির নেই। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতেও দেওয়া হবে না।’

এদিকে, এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু।

জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা অবশ্য সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহানগরের সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন বাচ্চুকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। তবে এর বিরোধিতা করেছেন জিএম কাদেরের অনুসারীরা। তারা অন্য একজনকে প্রার্থী দেবেন বলে জানিয়েছেন। সাহাবুদ্দিন বাচ্চু অবশ্য এখনও মাঠে নামেননি। প্রার্থী ঘোষণার পর তিনি পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া অন্য কোনো দলের সাম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কারও নাম এখনও সামনে আসেনি।

সারাবাংলা/পিটিএম

খায়রুজ্জামান লিটন টপ নিউজ মেয়র পদপ্রার্থী রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর