Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধানের খেতে পানি না পেয়ে ফের কৃষকের বিষপান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:২৯

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের খেতে পানি না পেয়ে আবারও এক কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। গত রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে নিজ জমিতে তিনি বিষপান করেন। সেদিন বিকেলে অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এই কৃষকের নাম মুকুল সরেন (৩৫)। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম গোপাল সরেন। বর্ষাপাড়া গ্রামের পাশের গ্রামটিই নিমঘটু।

গত বছরের মার্চে বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে এই নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেছিলেন। এতে দু’জনেরই মৃত্যু হয়। অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের কৃষক মুকুল সরেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুকুল সরেন জানিয়েছেন, বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না দেওয়ার কারণেই তিনি বিষপান করেছিলেন।

মুকুল সরেন জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাকে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, ‘পানি না দিলে তিনি এই বিষই খেয়ে নেবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি এই বিষ পান করেন।’

হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পাকস্থলী ধুয়ে বিষ বের করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

বিজ্ঞাপন

দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল জানান, তিনি শুনেছেন যে রোববার দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। কিন্তু আসলেই বিষপান করেছেন কিনা তা তিনি জানেন না।

চেয়ারম্যান জানান, এবার বোরো চাষ করে মুকুল দুই দিন তার কাছে গিয়েছেন। তিনি পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। ইউপির একজন সদস্যকে তার জমি দেখতে পাঠানো হয়েছিল। তিনি দেখে এসে বলেছেন যে, জমিতে কয়েক দিন পরে পানি দিলেও চলবে।

মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, ‘এই নলকূপের অধীনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক আছে। অনেক সময় তারা মদ পান করে জমিতে সেচ দিতে আসেন। মদ্যপ অবস্থায় পানি দিতে গেলে চেম্বারে উঠে তার পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে। পড়ে মারা গেলে এর দায়ও নিতে হবে। তাই নলকূপ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কোনো কৃষক মদ্যপ অবস্থায় গেলে তাকে পানি দেওয়া যাবে না। এ জন্য মদপান করে আসার কারণে মুকুলকেও দুই দিন পানি দেওয়া হয়নি।’

হাসেম আলী বলেন, “কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন সবাই এসেছে এক সঙ্গে। আমার ডিপের মুখ একটা, সবাইকে তো একসঙ্গে দিতে পারব না। মুকুল চুয়ানি আর গাঁজা খেয়ে এসেছিল। এসে বলছে, ‘পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাব।’ তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নিল। আমি বললাম, পানি দিচ্ছি, তুই জমিতে যা। তারপর সে চলে গেল। বিষ খেয়েছে কিনা জানি না।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘বিষ এত সস্তা নাকি? আবার বিষ খেয়েছে কেন? গত বছরের ঘটনার পর তো ওই ডিপের অপারেটরকে বাদ দিলাম। নতুন অপারেটর নিয়োগ দিলাম। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল? আমি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কৃষক মুকুল সরেনের সঙ্গে কথা বলব।’

বিজ্ঞাপন

এই গভীর নলকূপটি সব সময় চললে ২৫০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে পারে। গত বছর চাষ হয়েছিল এর চেয়েও বেশি জমি। গত বছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত লম্বা সময় কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তার বিরুদ্ধে মামলা দু’টির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।

ওই ঘটনার পর সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ। এবার তিনি ২৫০ বিঘা জমিকে চাষের আওতায় এনেছেন বলে জানিয়েছেন। তারপরও পানির জন্য কৃষকের বিষপানের ঘটনা ঘটল।

সোমবার (১০ এপ্রিল) রাতে কৃষক মুকুল সরেনের সঙ্গে দেখা করেছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ। মুকুল ডিসিকে জানান, পানি না পাওয়ার অভিমানে তিনি বিষপান করেন। তিনি পানি নিয়ে এই সমস্যার সমাধান চান।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, ওই কৃষকের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় জেলা প্রশাসন বহন করবে। তার সমস্যার কথা শুনে সমাধান করে দেওয়া হবে বলেও মুকুলকে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা) মো. শামসুল ইসলাম এবং পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার। জেলা প্রশাসক হাসপাতালে মুকুলের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।

সারাবাংলা/এমও

কৃষক ধানের খেত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর