Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বেসরকারি হাসপাতালে ৮০ শতাংশই সিজার, মেনে নেওয়া যায় না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২৩ ২১:২৩

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সি-সেকশনের (সিজার) হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সেটি ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একটি দেশে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সিজার মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু এর বেশি কখনোই মেনে নেওয়ার মতো নয়। কীভাবে সিজারের পরিমাণ কমিয়ে আনা যায় তার জন্য সবরকম চেষ্টাই আমরা করে যাব।

তিনি বলেন, আমরা মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমিয়েছি। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ডেলিভারির সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো সি-সেকশনও অনেক বেশি মাত্রায় বেড়েছে, যার পরিমাণ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই অনেক বেশি। এটা মেনে নেওয়া যায় না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, আমরা গত মাসে দেশের বেশকিছু হাসপাতালে ইন্সটিটিউশনাল প্র্যাকটিস (বৈকালীন সেবা) কার্যক্রম শুরু করেছি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ সরকারি হাসপাতালের বৈকালিক সেবায় চিকিৎসা নিচ্ছে। সেবা পেয়ে একদিকে যেমন জনগণ খুশি, অন্যদিকে যারা সেবা দিচ্ছেন তারাও খুশি।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে যতগুলো জেলা এবং উপজেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে সবগুলোতেই আমরা ইনস্টিটিউশনাল প্রাক্টিস নিশ্চিত করবো। এই কাজ খুব সুন্দর ভাবে শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় মাঝেমধ্যেই সমস্যা দেখা যায়, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে, ভুল বোঝাবুঝির কারণে মারামারিও হয়। এসব বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য এবং সেবার মান বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রায় শেষ করে ফেলেছি। আগামী সংসদে আমরা এই আইনটি পাস করার চেষ্টা করব।

জাহিদ মালেক বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমি মনে করি ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ প্রয়োজন। ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের মাধ্যমে আমরা আরও ভালোভাবে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার অর্থ হল জনগণ চিকিৎসা নিতে যেন ভোগান্তিতে, আর্থিক কষ্টে না পরে। রাষ্ট্র যেন তাকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়। স্বাস্থ্য সেবা পেতে তাকে যেন খরচ করতে না হয়। এটাই হলো ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ। আপনারা জানেন, ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের কাজ কিন্তু বাংলাদেশ করছে, বিশেষ করে সরকারিভাবে হচ্ছে।

ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩২ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা হাসপাতালে সামান্য কিছু সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়। জেলা পর্যায়ে এবং মেডিকেল কলেজে মূল চিকিৎসা কিন্তু ফ্রি। চিকিৎসা সংক্রান্ত সব সেবা সরকার ফ্রি দিয়ে যাচ্ছে। যেটা ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের মাধ্যমে দেওয়ার কথা। যেটা অনেকখানি হেলথ কাভারেজ বাংলাদেশ নিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রাইভেট সেক্টরে যে সেবা দিয়ে থাকে, যারা সেখানে সেবা নেন তাদেরকে ব্যয় করতে হয়। সেখানে আমাদের ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের ব্যবস্থা আরও বেশি করে নিতে হবে। বেসরকারি সেক্টরের সেবার মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা আমাদেরকে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজের মাধ্যমে করতে হবে। করোনার সময় আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যসেবা দিতে না পারলে দেশ থেমে যায়।

জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে শুধু হাসপাতাল বানালেই হবে না, এগুলোতে দক্ষ জনবলও প্রয়োজন। বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিন লাখ লোক কাজ করে। জনবল ও সেবার দিক থেকে আমরা এখন সবচেয়ে বৃহৎ মন্ত্রণালয়। আমাদের চিকিৎসক-নার্স বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু জনবল দিয়েই হবে না, পর্যাপ্ত ওষুধও দরকার। আশার দিক হলো দেশে উৎপাদিত হচ্ছে চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ। এসব ওষুধ আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করছি।

তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবায় অসংখ্য হাসপাতাল করলাম কিন্তু আমাদের দেখতে হবে মানুষ সেগুলোতে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে কি না। যদিও এ বিষয়টি কিছুটা ক্রিটিক্যাল। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৬০ হাজারে উন্নীত হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ৫ হাজারও ছিল না।

তিনি আরও বলেন, দেশে আশঙ্কাজনক হারে অসংক্রামক ব্যাধি বাড়ছে। ক্যান্সার, কিডনি হার্ট অ্যাটাকে অসংখ্য লোক মারা যায়। আট বিভাগে আটটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করেছি, আগামী বছর চালু হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো খুরশিদ আলমসহ অন্যান্যরা।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

টপ নিউজ বেসরকারি হাসপাতাল সিজার স্বাস্থ্যমন্ত্র


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর