স্ত্রীকে খুন করে লাশ পানির ট্যাঙ্কে রেখে পালানো যুবক গ্রেফতার
১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচ মাস আগে চট্টগ্রাম নগরীতে এক নারীকে খুনের ঘটনায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্ত্রীকে খুন করে লাশ পানির ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখে পেশায় রিকশা চালক ওই যুবক। এরপর তার শিশুসন্তানকে বাড়িওয়ালার বাসায় রেখে থানায় যান সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে। আরও দুইদিন চট্টগ্রামে অবস্থান করে এরপর পালিয়ে যান।
বুধবার (১২ এপ্রিল) রাতে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাসারা দক্ষিণ লস্করপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে পিবিআই জানিয়েছে।
গ্রেফতার হাসান আকন্দের (২৭) বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মাঝপাড়ায়। চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলায় স্ত্রী সর্জিনা আক্তার (২০) ও সাত মাস বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গতবছরের ৫ নভেম্বর নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় একটি ভবনের ছাদের পানির ট্যাঙ্ক থেকে সর্জিনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছিল, লাশ উদ্ধারের দুইদিন আগে শিশু সন্তানকে বাড়িওয়ালার বাসায় দিয়ে তার স্ত্রী ফিরলে দেয়ার কথা বলেছিলেন হাসান। এরপর থানায় স্ত্রী নিখোঁজের জিডি করতে যান।
দুইদিন পর ভবনের ছাদে পানির ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে পুলিশ গিয়ে সর্জিনার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সর্জিনার খালা স্মৃতি বেগম বাদী হয়ে ইপিজেড থানায় মামলা করেন। শুরু থেকেই পিবিআই মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে। টানা অনুসন্ধানের পর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় হাসানের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের পরিদর্শক মো. আনোয়ার উল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, হত্যাকাণ্ডের পর হাসান দুইদিন চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। লাশ উদ্ধারের পর পালিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ি চলে যান। এরপর সেখান থেকে কুমিল্লা, আবার ঢাকা হয়ে মুন্সীগঞ্জে চলে যান। সেখানে একটি গরুর খামারে কাজ নিয়ে গত পাঁচ মাস ধরে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন।
হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই পরিদর্শক আনোয়ার উল্লাহ জানান, রিকশাচালক হাসানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সার্জিনার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে বনিবনা ছিল না। সর্জিনা পটুয়াখালীর বাউফলের কেশবপুর ইউনিয়নের জাফরাবাদ গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে তাকে চট্টগ্রামে এনে ইপিজেডের একটি কারখানায় চাকরি দেন হাসান।
‘হাসানের রিকশা চালানো পছন্দ করতেন না সর্জিনা। তার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও হাসানের মতবিরোধ ছিল। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হতো। ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় সর্জিনার মামা তাদের বাসায় বেড়াতে আসেন। যাবার সময় তিনি হাসানের কাছে ৫০০ টাকা চান। কিন্তু হাসান তাকে ১০০টাকা দেন।’
আনোয়ার বলেন, ‘মামা চলে যাবার পর এ নিয়ে হাসানের সঙ্গে সর্জিনার ঝগড়া শুরু হয়। হাসানের ধাক্কায় সর্জিনা দেয়ালের সাথে লেগে মাটিতে পড়ে যায়। তখন সে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রাত ৩টার দিকে লাশ নিয়ে ছাদের ওপর পানির ট্যাঙ্কে রেখে দেয়।’
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ