Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পান্তা-ইলিশ: সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৯

পয়লা বৈশাখের সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়েছে পান্তা-ইলিশের অপসংস্কৃতি। এটি মূল সংস্কৃতি না হলেও দিনদিন ঢুকে যাচ্ছে সংস্কৃতির মধ্যেই। পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে, পহেলা বৈশাখ মানেই যেন পান্তার সঙ্গে ইলিশের ভুরি ভোজ। সংস্কৃতিজন ও বর্ষিয়ানরা বলছেন এ ধরনের অপসংস্কৃতি মুনাফালোভীদের ফাঁদ। বৈশাখের দোহাই দিয়ে ইলিশের দাম ব্যাপক বাড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা।

একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, খাদ্যভাস মানুষের নিজস্ব ব্যাপার। যার যেটি পছন্দ সেটি খাবে সেটি এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পয়লা বৈশাখে পান্তার সঙ্গে ইলিশ খেতে হবে এটা কোন সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। আজকাল মানুষ পয়লা বৈশাখে এটি খেয়ে থাকেন। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে দেখানোর জন্য। এর মধ্যে কোন সংস্কৃতি জড়িত নয়।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বাঙালির লোক উৎসব হিসেবে বিবেচিত পয়লা বৈশাখে থাকে নানা ধরণের আয়োজন। রমনা বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী গানের আসর, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও আবহমানকাল থেকে গ্রামে-গঞ্জে মেলা, নৌকা বাইচসহ নানা আয়োজন করা হয় পয়লা বৈশাখে। এই আয়োজনগুলোর মধ্যে ঢুকে পড়ে ‘পান্তা-ইলিশ’। রমনা বটমূলসহ রাজধানীর নানা জায়গায় এখন আয়োজন করা হয় পান্তা-ইলিশের। বিক্রিও হয় চড়া দামে।

পয়লা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনও সম্পর্ক নেই বলে মনে করছেন দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। তাদের মতে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক দিয়ে বৈশাখ উদযাপনের সঙ্গে এই খাবার দু’টির কোনও সম্পর্কই নেই। ৮০ ও ৯০ দশক থেকে পান্তা-ইলিশকে পয়লা বৈশাখের অনুষঙ্গ করে তোলা হয়। প্রকৃত অর্থে এটি বানোয়াট সংস্কৃতিচর্চা। এর সঙ্গে বাঙালির কোনও সম্পর্ক নেই। পান্তা হচ্ছে গরীবের খাবার আর উৎসবের সময় মানুষ যেখানে ভালো ভালো খাবার খায়, সেখানে পান্তাকে খাওয়ানো হচ্ছে ব্যবসার খাতিরে।

বিজ্ঞাপন

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ সারাবাংলাকে বলেন, আমার বয়স এখন ৬৬ বছর চলে। আমি কোন দিন পয়লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাইনি। গত ১০-১২ বছর ধরে এই খাবার দুটিকে বৈশাখের অনুষঙ্গ হিসেবে মিডিয়াই আবিস্কার করেছে। আমরাতো বরং আগে গ্রামে দেখেছি পয়লা বৈশাখে নানান জাতের শাক ও শবজি খাওয়া হতো। সেটিই ছিল প্রকৃত সংস্কৃতির অংশ। বর্তমানে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের ব্যবহার বেড়েছে। এটা আমাদের বৈশাখের সংস্কৃতি কখনও ছিল না, আজও নেই।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ইংরেজি জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর বা বাংলা আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্রের সময়টিই হচ্ছে ইলিশ মাছ খাওয়ার আসল সময়। এই সময়ের ইলিশ বেশ সুস্বাদু হয়। পাশাপাশি মার্চের দিকে ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ কারণে মৎস্য অধিদফতর থেকে ১-৭ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করা হয়। কিন্তু অধিক লাভের আসায় এসময়টাতেও দেখা যায় গোপনে মাছ শিকার করতে। তারপর সেগুলো সংরক্ষণ করে চড়া চামে বিক্রি করা হয় পয়লা বৈশাখে যোগান দেওয়ার জন্য। রাজধানীর কাওরানবাজার, ধানমন্ডি বাজার, নিউমার্কেট, শেওড়াপাড়া ও মিরপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় ইলিশের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম (শাকিল) সারাবাংলাকে বলেন, পান্তা ও ইলিশ এ দুটি খাবার মানুষ এমনিতেও খায়। যেমন গ্রামের কৃষকেরা প্রায় সারাবছরই পান্তা খায়। বিশেষ করে মৌসুমভিত্তিক অর্থাৎ গরমের সময় গ্রামে এটি আরও বেশি পরিমাণ খেয়ে থাকে। আর ইলিশতো সবার প্রিয় একটি মাছ। কিন্তু এ দুটি খাবারে সঙ্গে পয়লা বৈশাখের কোন সম্পর্ক নেই। এটা আমাদের কোন সংস্কৃতির অঙ্গ নয়।

সারাবাংলা/জেজে/রমু

পান্তা-ইলিশ বৈশাখী আয়োজন বৈশাখী আয়োজন ১৪৩০

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর