Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৈশাখী ভাতা পান না অধিকাংশ বেসরকারি চাকরিজীবী

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৫২

ঢাকা: বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ। প্রত্যেক বাঙালির কাছে এই উৎসব আনন্দের এবং বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক। এই উৎসবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বেতনের ২০ শতাংশ হারে ভাতা পান। কিন্তু এই ভাতা থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ বেসরকারি চাকুরিজীবী। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভাতা না দেওয়া সরকারের আইন ভঙ্গ করা। সেইসঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবীদের এই ভাতা না পাওয়ায় এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

নির্বাহী আদেশে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট জারি করে সরকার। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়। সাধারণত মার্চ মাসের বেতনের আগেই সরকারি চাকুরিজীবীরা এই ভাতা পান। তবে দেশের বেসরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শুরু থেকেই।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারি সব প্রতিষ্ঠান, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। তবে মুষ্টিমেয় কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বৈশাখী ভাতা পান। দেশের অর্থনৈতিক খাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করা কর্মীরাও এই ভাতা থেকে বঞ্চিত।

সাভার রফতানিতে একটি গার্মেন্টসে কর্মরত আসমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৮-১০ বছর ধরে গার্মেন্টসে কাজ করি। কিন্তু সরকারি চাকুরিজীবীরা বৈশাখ ভাতা পায়, আমরা পাই না। আমরা এখনো ঈদের বোনাসও পাইনি। তবে বেতন হয়েছে। আমরা যদি বৈশাখী ভাতা পেতাম তাহলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়িত্ব এবং আন্তরিকতা আরও বেড়ে যেত। এখন যে কম সেটা কিন্তু নয়, তবে ভাতা পেলে বেশি ভাল লাগতো।’

বৈশাখী ভাতা বিষয়ে ব্র্যাক মাইগ্রেশনের প্রধান শরিফুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এই ধরনের উদ্যোগ কর্মীদের মধ্যে যেমন আশার সঞ্চার করে তেমনি ভালো কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়। তবে এটি যেহেতু বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো এই চর্চা চালু করতে পারে, তাতে কর্ম পরিবেশ ভাল হয়ে থাকে।’

সিনিয়র সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াজ রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি রাষ্ট্র কর্তৃক ঘোষিত একটি উৎসব ভাতা। সুতরাং এটি একটি আইন। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এটি দিচ্ছে না, তারা রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করছেন। প্রত্যেকটা কর্মীর অধিকার রয়েছে এই ভাতা পাওয়ার। কর্মীদের এই ভাতা না দেওয়ার মাধ্যমে তারা এক প্রকার সরকারকেই প্রত্যাখান করছেন। বেসরকারি কর্মীদের অধিকার রয়েছে এই ভাতা পাওয়ার।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনোভাবেই কর্মীদের অধিকার বঞ্চিত করতে পারে না কর্তৃপক্ষ। অনেকেই বলে এটি বোনাস, কিন্তু আসলে তা নয়। ঈদ ও দুর্গা পূজাসহ এগুলো উৎসব ভাতা… এমন ভাতা সারা পৃথিবীতেই আছে। যেহেতু এটি উৎসব ভাতা, তাই ভাতা হিসেবেই কর্মীদের এটি দিতে হবে। এটি দেওয়ার মাধ্যমে যেমন কর্মস্পৃহা বাড়বে তেমনিভাবে প্রতিষ্ঠানের ওপর তার দায়বদ্ধতাও বাড়বে। কোম্পানির আয়ে তারা (কর্মীরা) আরও বেশি নিবেদিত হবে। যারা এটি দিচ্ছেন না তারা প্রকারান্তে নিজেদেরই ক্ষতি করছেন।’

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা (অর্থ) ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব নীতিতে চলে। সরকারকে এই বিষয়ে আরও এগিয়ে আসতে হবে। যেমন ধরেন, যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক নয় তারা যদি সরকারি সহায়তা না পায় তাহলে কর্মীদের ভাতা কিভাবে দেবে। ফলে চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত সরকারের। সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত দিতেই পারে, কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মানবে কি মানবে না সেটা কিন্তু তাদের ওপর নির্ভর করে। এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান না দিলে আপনার আমার কিন্তু কিছুই করার নেই। তবে ভাতা দিলে কর্মীদের মধ্যে আস্থার পাশাপাশি কাজের আগ্রহও বাড়ে।’

সারাবাংলা/এসজে/রমু

বেসরকারি চাকরিজীবী বৈশাখী ভাতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর