রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২২ বছরেও শেষ হয়নি মামলা
১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৩৭
ঢাকা: ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল। বরাবরের মতোই বঙ্গাব্দ বরণের উৎসব রমনার বটমূলে। হঠাৎই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। বোমার আঘাতে এলোমেলো গোটা এলাকা। ঘৃণ্যতম সে হামলায় রমনাতেই প্রাণ হারান নয় জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও একজনের। কলঙ্কিত সে হামলার ২২ বছর পেরিয়েছে। তবে এ ঘটনায় দুই মামলার মধ্যে একটির রায় হলেও আরেকটিতে রায়ই হয়নি এখনো।
রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলাটির রায় হয় ঘটনার ১৩ বছর পর। তাতে আট জনের ফাঁসি ও ছয় জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত। হত্যা মামলার রায় হলেও একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজই শেষ হয়নি এখনো। মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে ছিল। কিন্ত গত বছরের ২৮ জুলাই মামলাটি বদলি করে মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত ৩ জানুয়ারি মামলাটি মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫ এর বিচারক তেহসিন ইফতেখারের আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে, কয়েকজন আসামির পক্ষে মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন থেকে উত্তোলন করে কয়েকজন সাক্ষীকে জেরা করার আবেদন করেন। মুফতি আ. হাই গ্রেফতার হওয়ার পর তার আইনজীবী ইদি আমিন ৫ সাক্ষীকে পুনরায় জেরার আবেদন করেন। যদিও আদালত তা নামঞ্জুর করেন। এর পর আসামিপক্ষ বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে উচ্চ আদালতে যান। পরে মামলাটি যুক্তিতর্ক থেকে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির পর্যায়ে আসে। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ৩০ মার্চ নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। বিচারক তেহসিন ইফতেখার আগামী ১৭ এপ্রিল মামলাটির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
বিস্ফোরক আইনের মামলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। আসামিপক্ষের কালক্ষেপণে মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। তারা কালক্ষেপণ না করলে মামলাটির বিচার এতদিন শেষ হয়ে যেত। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় না। তাদের ভার্চুয়ালি কারাগার থেকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি, আগামী মে মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আট জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা ইয়াহিয়া ও মাওলানা আবু তাহের। দণ্ড পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় ঘটনাস্থলেই নয় জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় আরও একজন। ওই ঘটনায় রাজধানীর নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা বারবার পরিবর্তন, সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল, বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তাদের আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার ৮ম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ মামলা দু’টির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন।
২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বিচারের জন্য মামলা দুটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথক মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ বিচারের জন্য পাঠানো হয়। বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনও বিচারিক আদালতেই আছে।
সারাবাংলা/এআই/পিটিএম